সোলার নয়, কারখানা চলার বিদ্যুৎ দিন

সম্পাদকীয়

সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে বলে যে অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়নের পথে। অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কথা ভাবা যেত না, সেখানেও বিজলি বাতি চলছে, বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরছে। তবে কিছু এলাকায়, বিশেষ করে দ্বীপ এলাকায় বিদ্যুৎ গেছে নামকাওয়াস্তে। সেসব জায়গায় সোলার প্যানেল বা ছোট পরিসরে জ্বালানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও তাতে না চলে পাখা, না ঘোরে কারখানার চাকা।

এ ধরনের একটি এলাকা হলো ভোলার মনপুরা উপজেলা। সেখানে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সৌরবিদ্যুৎ আছে। কিন্তু সে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে গুটিকয় মানুষের ঘরে। এই অবস্থায় মনপুরাকে পুরোপুরি আলোকিত করতে ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পেও নবায়নযোগ্য এ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। সমস্যা হলো, এই বিদ্যুতে শিল্পকারখানা চালানো যাবে না। এ কারণেই এলাকার লোকজন মনপুরাকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার দাবি জানাচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি যথেষ্ট যৌক্তিক। এই উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষের বাস। এখানে বর্তমানে চার হাজারের মতো গ্রাহক দিনে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। সৌরবিদ্যুতের বাইরে ডিজেলচালিত ইঞ্জিনে ৭০০ থেকে ৭৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ওজোপাডিকো (ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড)। দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য সেই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন উপজেলা শহরের হাজিরহাট বাজার ও আশপাশের ৮৫৪ গ্রাহক। এর বাইরে বাংলাবাজার, সিরাজগঞ্জ বাজার ও কাউয়ারটেক এলাকায় সৌরবিদ্যুতের যে তিনটি মিনি গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তা ‘প্রি-পেইড’ পদ্ধতিতে ৩০ টাকা ইউনিট দরে কিনতে হয়। এই দামে বিদ্যুৎ কেনা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে।

এখন ৬৫০ কোটি টাকা খরচ করে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে বলা হচ্ছে, তা আসলে স্থানীয় মানুষের খুব একটা কাজে আসবে না। সে কারণে জাতীয় গ্রিড থেকে যদি বিদ্যুৎ আনা হয়, তাহলে মনপুরাবাসী প্রকৃতপক্ষে উপকৃত হবে। মনপুরার বাসিন্দারা জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ চাইলেও সরকারের দিক থেকে তা নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের বাস্তবতায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ থেকে প্রভাবশালী মহল ফায়দা তোলে। এই দুর্ভোগ উঠে গেলে তাদের পকেট ভারী হওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যায়। মনপুরায় জাতীয় গ্রেড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অনীহার পেছনে সে ধরনের কোনো চক্রের হাত আছে কি না, তা দ্রুত সরকারকে তলিয়ে দেখতে হবে।