স্থানীয় প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিক

সম্পাদকীয়

গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। শিশুরাই বেলুনের মূল ক্রেতা হওয়ায় বিস্ফোরণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হতাহত হচ্ছে শিশুরা। হতাহত থেকে বাদ যাচ্ছেন না বেলুন বিক্রেতারাও। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মাদারীপুরের রাজৈরে ভোটকেন্দ্রের পাশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় এক বেলুন বিক্রেতা ও এক শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে। জন্মদিনের এক দিন আগে ঢাকার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ১০ বছরের শিশু আফনান মোল্লা। সে ছিল মা-বাবার একমাত্র সন্তান। এ ঘটনায় আরও দুই বেলুন বিক্রেতা গুরুতর আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে সারা দেশে কয়েকটি বেলুন সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। গত মে মাসে রাজশাহীতে বেলুন সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে উড়ে গিয়ে একটা বাড়ি লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।

সিলিন্ডার ব্যবহার করে বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করা অবৈধ। এরপরও প্রকাশ্যেই এভাবে বেলুন বিক্রি করা হয় গোটা দেশে। মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুমোদনহীন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে গিয়ে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। দেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস বেলুন বিক্রি ঠেকাতে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। বেলুন বিক্রেতাদের সচেতন করতে প্রশাসনিক পর্যায়ে কোনো উদ্যোগও আমরা দেখি না।

২০১৯ সালের অক্টোবরে রাজধানীর রূপনগর এলাকায় গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ভয়াবহতা আমরা ভুলে যেতে বসেছি। সেই ঘটনায় নিহত হয়েছিল অন্তত আট শিশু। একসঙ্গে এতগুলো শিশুর মৃত্যু গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়ে গেলেও ধীরে ধীরে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। ফলে একের পর এক গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ দেখছি আমরা।

গ্যাস বেলুন বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখতে হবে বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও পুলিশকে। কিন্তু তাদের উভয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের দাবি, অনুমোদনহীন সিলিন্ডার বহনকারী বেলুন বিক্রেতাদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন সময় চিঠি দেওয়া হলেও থানা-পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, বিস্ফোরক অধিদপ্তর চিঠি দিয়ে দায় এড়াতে চায়। পুলিশ কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহায়তা নিয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তর চাইলে নিজেরাই অভিযান চালাতে পারে।

ভ্রাম্যমাণ বেলুন বিক্রেতাদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। জেলা–উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন পদক্ষেপ নিক। আমরা চাই সমন্বিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বন্ধ করা হোক সিলিন্ডার ব্যবহার করে গ্যাস ভরে বেলুন বিক্রি। আমরা চাই না আর কোনো আফনান মোল্লা লাশ হয়ে যাক।