স্বল্প আয়ের মানুষ যাবে কোথায়

সম্পাদকীয়

করোনাকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। গত মাসে চালের দাম যখন কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বাড়ছিল, তখন সরকার চাল আমদানির ওপর বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ায় বাজারে স্থিতিও এসেছিল। কিন্তু সেটি ছিল সাময়িক। গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে আরও দুই টাকা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয়েছে ৪৬ থেকে ৪৭ টাকায়। দাম বেড়েছে মাঝারি মানের চালেরও। এই চালের (বিআর-২৮) দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের মানুষ যে সরু চাল কিনে থাকে, তার দাম বাড়েনি। নাজিরশাইল আগের মতোই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, মিনিকেট ৬০ থেকে ৬২ টাকায়।

শ্রেণিবিভক্ত বাংলাদেশে চালেরও শ্রেণিবিন্যাস আছে—মোটা, মাঝারি ও চিকন চাল। চিকন চাল কেনে বিত্তবান মানুষ। তাই মোটা ও মাঝারি চালের দাম বাড়লে দরিদ্রশ্রেণি ও সীমিত আয়ের মানুষ ভীষণ বিপাকে পড়ে। চালের পাশাপাশি মোটা দানার মসুর ডালেরও দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। আগে যে ডালের দাম ছিল ৮৫ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়লে কম কিনে ভোক্তা পুষিয়ে নিতে পারে। চালের ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব নয়। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাত খেতেই হবে।

মাছে-ভাতে বাঙালি বলে একদা আমাদের পরিচিতি ছিল। দুর্মূল্যের বাজারে সেই মাছ-ভাতের জায়গা দখল করেছে ডাল-ভাত। যাদের মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই, তারা ডাল-ভাত ও সামান্য সবজি দিয়েই চাহিদা মেটায়। দাম বাড়ার এই প্রবণতা কেবল ডাল-চালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বেড়েছে মাছ, মাংস, চিনি, ভোজ্যতেল ও সবজির দামও। গত বছর এই মৌসুমে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছিল, দামও সাধারণ মানুষের আয়ত্তে ছিল। এবার ইলিশের সরবরাহ কম, দাম বেশি। ফলে অন্যান্য মাছের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। সেই সঙ্গে সোনালিকা (কক) মুরগির দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষের কপালে ভাঁজ পড়াটাই স্বাভাবিক। দাম বেড়েছে সবজিরও। পেঁপে, কচুমুখী ও ঢ্যাঁড়স ছাড়া কোনো সবজি ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায় না। এক কেজি বরবটি ৮০ টাকা এবং এক কেজি সিম ১২০ টাকায় বিক্রি হলে কজনের পক্ষে তা কেনা সম্ভব?

করোনাকালে মানুষের আয়রোজগার অনেক কমে গেছে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। ফলে অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম শাকসবজি কিনছেন। মাছ-মাংসের পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছেন। গত বছর মহামারির মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ বছর বাজারের যে গতিবিধি, ধারণা করা যায়, জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ যাবে কোথায়?

ভারতসহ অনেক দেশেই নানা রকম রেশনিং বা স্বল্প দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সীমিত আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমাদের এখানে সে রকম কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকার রেশনিং চালু করতে না পারুক, অন্তত বাজার তদারকি ব্যবস্থাটি জোরদার করতে পারে। তাতে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর পণ্যমূল্যের বোঝা কিছুটা হলেও কমবে।