হলমার্ক কেলেঙ্কারি

শেষ পর্যন্ত সরকার হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটিই বাস্তবসম্মত। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সোনালী ব্যাংককে মামলা করার যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিসের ভিত্তিতে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? এত বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা মাত্র তিনজন কর্মকর্তার যোগসাজশে হয়েছে, তা বিশ্বাস করা কঠিন। ঘটনার চার মাস পরও মামলা নিয়ে এই ঢাক গুড়গুড় ভাব ও অযথা বিলম্ব গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ আদায়েরও কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। হলমার্ক নামে একটি অখ্যাত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখা থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেয় ব্যাংকেরই কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে। এই শাখা থেকে আরও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন সম্ভাব্য মামলাটি যৌক্তিক পরিণতি পাবে কি না, তা নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছা ও দুদকের আন্তরিকতার ওপর।কেলেঙ্কারির হোতাদের বিচারের পাশাপাশি অর্থ আদায়ের প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হলমার্ককে ১৫ দিনের মধ্যে অর্ধেক অর্থ ফেরত দেওয়ার চিঠি দিয়েছিল। সেই ১৫ দিন পার হলেও একটি টাকাও তারা ফেরত দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ব্যাংকের পাওনা ফেরত দিতে ৩০ বছর সময় লাগবে। এ রকম একটি জালিয়াত প্রতিষ্ঠানকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যায় না। হাতিয়ে নেওয়া অর্থ আদায় করতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে হাওয়া ভবন এবং সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরকে জিয়া পরিষদের লোক বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর এই বক্তব্য আমাদের আরও শঙ্কিত করে। সাবেক সরকারের দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণাকারীই সরকারের আমলে যদি হাওয়া ভবন ও জিয়া পরিষদের লোকেরা এ রকম জালিয়াতি করতে পারেন, তা হলে অন্যরা কী পরিমাণ দুর্নীতি করছেন, তা ভেবে দেখার বিষয়। এখানে রাজনৈতিক পরিচয় বিচার্য নয়। যাঁরা সোনালী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা যেভাবে দায় এড়িয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁদের অজ্ঞাতেই যদি সোনালী ব্যাংকে এত বড় দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে পরিচালনা পর্ষদ রাখারই বা কী প্রয়োজন? বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এটাই বৃহত্তম দুর্নীতি। সরকারের উচিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। তাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের জালিয়াতি করতে সাহস পাবে না।আশা করি, অবিলম্বে দুদক সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে এবং তদন্তকাজ সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নেবে। অন্যদিকে, সরকারকেও এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে দুদক স্বাধীনভাবে মামলাটি পরিচালনা করতে পারবে এবং তাদের কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না।