১৫ বছরেও কেন চালু করা গেল না

সম্পাদকীয়

এ দেশে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন, সেটি চালু ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নানা সমালোচনা আছে। নিঃসন্দেহে অনেক প্রকল্পের ক্ষেত্রে সুনাম দেখতে পাই আমরা। কিন্তু সেসব প্রকল্পের সাফল্যকে ম্লান করে দেয় ঝিনাইদহে স্যালাইন কারখানার মতো প্রকল্প। স্যালাইন তৈরির কারখানাটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০০৭ সালে। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে দোতলা ভবন তৈরি করা হয়। কিন্তু এত দিনেও কারখানাটি চালু হয়নি। ১৫ বছর ধরে পড়ে থাকতে থাকতে ওই ভবন এখন নষ্ট হতে চলেছে। শুধু জনগণের টাকায় নির্মিত সরকারি সম্পত্তি বলেই প্রকল্পটির এ হাল হলো, এর কোনো দায়দায়িত্ব নিল না কেউ। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, খাওয়ার স্যালাইন (ওআরএস) তৈরির জন্য জেলা সদরের পুরোনো হাসপাতাল এলাকায় কারখানাটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাজ শেষে ভবন হস্তান্তর করাও হয়। তবে স্যালাইন তৈরির প্রশাসনিক অনুমোদন মেলেনি। ফলে জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিএনপি সরকারের শেষ মেয়াদে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন ঝিনাইদহ-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য এম মসিউর রহমান। তিনি এ স্যালাইন তৈরির কারখানা স্থাপনে ভূমিকা রাখেন।

এ ছাড়া তিনি ওই সময় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি ভবন, নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। কিন্তু স্যালাইন কারখানাটি এত দিনেও কেন আলোর মুখ দেখল না? আগের সরকারের আমলে নেওয়া প্রকল্প অবহেলার শিকার হওয়ার নজির এ দেশে নতুন নয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটি হতে পারে। তাই বলে এভাবে জনগণের টাকায় বাস্তবায়িত প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়ে যাবে?

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, তাঁরা জনবল নিয়োগ ও কারখানা চালুর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রুতই কারখানাটি চালু করা সম্ভব হবে। কিন্তু কখন সেটি সম্ভব হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি। কথা হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১৫ বছরে বিভিন্ন খাতে বা প্রকল্পে জনবল নিয়োগ বন্ধ রাখেনি, তাহলে স্যালাইন কারখানাটির ক্ষেত্রে এমন ‘বিমাতাসুলভ’ আচরণ কেন করা হলো? এর দায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। এর জন্য কি কাউকে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কি দেখব না আমরা? দ্রুত জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে স্যালাইন কারখানাটি চালু করা হোক।