'বন্দুকযুদ্ধ' বন্ধ করুন

গত শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের খবর, পাবনার ঈশ্বরদী ও ফরিদপুরের মধুখালীতে বৃহস্পতিবার রাতে র্যা ব ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছয়জন নিহত হয়েছেন। তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মানুষ মারা যাওয়ার খবর প্রতিনিয়তই পাওয়া যাচ্ছে; কিন্তু এক রাতে ছয়জনের মৃত্যু নৈমিত্তিক ঘটনা নয়। এ কারণেই প্রথম আলোর শেষ পাতায় এ খবর ছাপা হয়েছে অপেক্ষাকৃত বড় শিরোনামে। একই দিনে প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে আরেকটি খবর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম তাঁর এলাকার জনসাধারণের আহ্বান জানিয়েছেন: ‘যদি ডাকাত হাতেনাতে ধরতে পারেন, এলাকার লোকজনকে মাইকে ডেকে এনে ওকে পিষে মেরে ফেলেন। মাদকের গাড়ি হলে সেটি আগুনে পুড়িয়ে দেবেন। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, আপনাদের নামে কোনো মামলা হবে না।’
এ বিষয়ে ওই এসপিকে হাইকোর্ট যথার্থই তলব করেছেন। তাঁর আহ্বানের মধ্য দিয়ে যে মানসিকতার প্রকাশ ঘটে, তা শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, গুরুতর উদ্বেগের বিষয়ও বটে। সংশয় জাগে, খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, জঙ্গি তৎপরতাসহ নানা ধরনের অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সামগ্রিক মানসিকতাই এই রকম কি না। র্যা ব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যাঁরা প্রাণ হারাচ্ছেন, তাঁদের আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য, জঙ্গি ইত্যাদি বলে দাবি করা হচ্ছে। তার মানে কি এই যে এসব অপরাধ দমনের কার্যকর কৌশল হিসেবে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বেছে নেওয়া হয়েছে একটা অলিখিত কিন্তু পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত হিসেবে?
‘ক্রসফায়ার’, ‘এনকাউন্টার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ইত্যাদি নামে যে বিচারবহির্ভূত হত্যার চর্চা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের মধ্যে চলে আসছে, তা প্রকৃতপক্ষে আমাদের আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাকে ক্রমেই আরও দুর্বল করছে। এর ফলে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা ও বাহিনীগুলোর সদস্যদের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে। বাহিনীগুলোর সদস্যদের একটা অংশের নৈতিকতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নানা উদ্দেশ্য ও স্বার্থে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ব্যবহার করার অভিযোগ বাড়ছে।
তাই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের পরিচয়ে লোকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া, পরে সে ব্যক্তির ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়া কিংবা চিরতরে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া—এসবও দ্রুত বন্ধ করা দরকার। কেননা, এভাবে আমাদের আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা কার্যকারিতা হারাচ্ছে, আইন প্রয়োগের প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুতর ক্ষতি হচ্ছে।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা ক্ষমতায় গেলে ‘ক্রসফায়ার’ বা বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করবে। তাদের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত।