ঈদে সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন নয়

সম্পাদকীয়

সমতলভূমির দেশ হলেও বাংলাদেশ সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনায় শীর্ষে থাকা দেশগুলোর একটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বায়ুদূষণে শীর্ষে থাকা শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ঠেলাঠেলি করে ঠাঁই পাচ্ছে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও বায়ুদূষণ দুই ক্ষেত্রেই প্রধানভাবে দায়ী ফিটনেসবিহীন গাড়ি। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ট্রাফিক পুলিশ সবার সামনেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলে।

প্রতিবছর ঈদ সামনে রেখে পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন বাস রংচং করে সড়কে নামানোর রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এবারও তার ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে না। প্রথম আলোর খবর বলছে, ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে এখন চলছে এ রকম লক্কড়ঝক্কড় ও পুরোনো বাস মেরামতের কাজ। কোনোটির ভাঙা, বেঁকে যাওয়া অংশে জোড়াতালি দেওয়া হচ্ছে। কোনোটিতে লাগানো হচ্ছে জানালার নতুন কাচ।

প্রথম আলোর প্রতিবেদক বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে সাতটি পুরোনো বাস রং করতে ও মেরামত করতে দেখতে পান। কারণ ব্যাখ্যা করে একজন শ্রমিক বলেন, যাত্রীরা অনেক শৌখিন। রং না করলে বাসে কেউ উঠবে না। তাই ঈদের আগেই ঝকঝকে করা হবে। এ ভাষ্যেই উঠে আসে প্রতারণাকে কীভাবে যাত্রীসেবার হাতিয়ার করে তোলা হচ্ছে।

প্রতিবছর ঈদে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় শহরগুলো থেকে কয়েক কোটি মানুষ তাঁদের গ্রামের বাড়িতে যান। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এ সময় মানুষের যাতায়াত বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এই যাত্রীর চাহিদাকেই পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রং করে সড়কে নামানো হয়। দূরপাল্লা তো দূরে থাক, শহরের মধ্যে চলাচল অনুপযোগী এসব বাস নামার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বেড়ে যায়, আবার সড়কের মাঝে বাস বিকল হয়ে পড়ায় অসহনীয় যানজটে দুর্বিষহ ভোগান্তিতে পড়েন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০২৩ সালে রোজার ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে দেশে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জনের মৃত্যু হয়। অর্ধেকের বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির কারণ মোটরসাইকেল হলেও ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবদানও কম নয়।

সাময়িক মুনাফার লোভে রংচং করে সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামিয়ে যাত্রীসাধারণের জানমাল ঝুঁকির মুখে ফেলছেন বাসমালিকেরা। সাধারণত এক বছরের জন্য বাসের ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়, প্রতিবছর সনদ নবায়ন করতে হয়। ঈদ সামনে রেখে যাতে সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি কোনোভাবেই চলতে না পারে, সে জন্য বিআরটিএ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।