পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দেওয়ার পরও বাজারে সুখবর নেই। বাস্তবে রমজান শুরুর আগেই রোজায় প্রয়োজন হয়, এমন খাদ্যপণ্যের দাম চড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা চিনি, ছোলা, ব্রয়লার মুরগি, বেগুন, আলু, লেবুসহ বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে। খেজুরের দামও বেশ চড়া। রোজায় প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম যাতে ঊর্ধ্বমুখী না হয়, সে জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে চার পণ্যে শুল্ক কমায় সরকার। এর সুফল যে বাজারে মিলছে, তা ক্রেতাদের দীর্ঘশ্বাসই বলে দিচ্ছে। এর ব্যাখ্যা কি সরকারের কাছে আছে?
পবিত্র রমজান মাসে বেশির ভাগ দেশেই নিত্যপণ্যের দাম যেখানে কমে, সেখানে বাংলাদেশের সিংহভাগ ক্রেতার দুর্ভোগ ও দীর্ঘশ্বাস বাড়ে। রোজায় প্রয়োজন এ রকম খাদ্যপণ্যের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এর প্রভাবে বাজারে অন্য নিত্যপণ্যের দামও বাড়তি থাকে। রমজান মাসে দাম বাড়া নিয়ে বেশি হইচই ও সমালোচনা হওয়ায় গত কয়েক বছরের প্রবণতা হলো, রমজানের আগেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না।
প্রথম আলোর খবর বলছে, চট্টগ্রামে চিনির একটি গুদামে আগুন লাগার পর পাইকারিতে চিনির দাম নতুন করে কেজিতে দুই টাকা ও খুচরা বাজারে পাঁচ টাকার মতো বেড়েছে। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চিনি সরবরাহে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে না। ছোলা ও কয়েক পদের ডালের দাম কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানিতে ডলারের খরচ বেশি পড়ায় কয়েক মাস ধরে বাজারে ডালজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে নতুন করে ছোলা ও ডালের দাম বাড়েনি। রোজা উপলক্ষে খুচরা বিক্রেতারা এখন কিছুটা বাড়িয়ে নিচ্ছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা পর্যায়—যেকোনো পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা চাইলেই কি এভাবে দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন? এর অর্থ হলো, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই যেকোনো পর্যায়ের ব্যবসায়ী কারসাজি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন। এটা বাজার তদারকিতে সরকারি সংস্থাগুলোর সীমাহীন ব্যর্থতার প্রতিফলন নয় কি?
পবিত্র রমজান মাসের আগে এবারও প্রাণিজ প্রোটিনের বাজার চড়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মাসখানেক আগে হঠাৎ করেই গরুর মাংসের দাম কমে গিয়েছিল। আবার নির্বাচনের পরে একলাফে দাম বেড়ে যায়। এভাবে একলাফে দাম কমা ও বাড়া—কোনোভাবেই বাজারের স্বাভাবিক আচরণ বলা যায় না। কিন্তু জানুয়ারি মাস থেকে গরুর মাংসের দাম বাড়ায় বাজারে সব ধরনের মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দামও বাড়ে। কিন্তু রোজা শুরুর আগের সপ্তাহে কীভাবে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে।
গত দুই বছরে টানা উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় সংকট তৈরি হয়েছে। মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত মানুষ নানাভাবে কায়দা করে এবং খরচ কেটেছেঁটে সমন্বয় করে চলছে। এরপর আবার মার্চ মাসের শুরুতেই বিদ্যুতের দাম এক দফা বেড়েছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করলেও ডিজেল–অকটেনের দাম নামমাত্র কমায় তার প্রভাব জনজীবনে না পড়ার সম্ভাবনা বেশি। এ অবস্থায় রোজা ‘উপলক্ষে’ ব্যবসায়ীরা যদি নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক রাখতে গেলে পণ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখার বিকল্প নেই। কিন্তু বাজারে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম চড়ার কারণ হলো বাজারের তদারকিহীনতা। আবার আমদানিনির্ভর পণ্য আমদানিতে প্রতিযোগিতা না থাকার কারণেও দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়। পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ যাতে কোনোভাবেই না পান, তার জন্য নিয়মিত বাজার তদারক ও অভিযান পরিচালনা করতে হবে।