মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্প শুরুতে বেশ প্রশংসিত হলেও নানা অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগে বেশ সমালোচনাও তৈরি করে। অপরিকল্পিত ও মানহীন কাজের কারণে অনেক জায়গায় ঘর ফাঁকা পড়ে আছে বা অনেকে সেসব ঘর ছেড়ে চলে গেছেন, এমন অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। আবার অনেক মানুষের জন্য এই ঘরগুলোই শেষ আশ্রয় ও একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই। পাবনায় এমন একটি গুচ্ছগ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের চিরচেনা সেই চিত্রটা মোটেই পাল্টায়নি। চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু ব্যবসা, দখলবাজি তো বন্ধ হয়ইনি; বরং এসব অবৈধ কার্যক্রমে এসেছে নতুন নিয়ন্ত্রণ। পাবনা জেলা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামুয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা এতে ভুক্তভোগী হয়েছেন। সরকার পতনের পর হুমকি দিয়ে বাসিন্দাদের তাড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানকার ঘরগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের জমির মালিকানা দাবি করে সেখানে ব্যক্তিমালিকানার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রকল্পে থাকা অসহায় গৃহহীন পরিবারগুলো আবার ঘরছাড়া হয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
লাগিয়ে দেওয়া সাইনবোর্ডে লেখা আছে, ওই জায়গা নিয়ে স্থানীয় আদালতে মামলা চলমান। মামলার বাদীদের নামও সেই সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা আছে। সাইনবোর্ডের এসব নাম থেকেই স্পষ্ট হয়, গুচ্ছগ্রামটি উচ্ছেদের সঙ্গে কাদের হাত রয়েছে। এখন জায়গাটি নিয়ে যদি মামলা চলমান থেকে থাকে, সেটি আইনিভাবে নিষ্পত্তি হবে কিন্তু ঘরগুলোর বাসিন্দাদের কেন উচ্ছেদ করা হলো? এটি চরম অমানবিক কাজ।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলছেন, প্রকল্পে থাকা পরিবারগুলোর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাঁদের রাতারাতি ঘরছাড়া করা হয়েছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। তারা বলেছে, বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। গৃহহারা মানুষগুলো অনেক কষ্টে আছেন। জেলা প্রশাসকের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। কারা কেন ঘরগুলো ভেঙেছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য যা করণীয়, তা করা হবে।
যেভাবে গুচ্ছগ্রামটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। আশ্রয়হীন ও গৃহহীন মানুষগুলো আবারও আশ্রয়হীন ও গৃহহীন হয়ে গেলেন। তাঁদের ওপর জুলুমকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে। এমন ক্ষমতাচর্চা কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এখন জেলা প্রশাসক যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে কতটা আন্তরিক তিনি, সেটিই দেখার অপেক্ষা।