শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে দ্রুত উদ্যোগ নিন

সম্পাদকীয়

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রকল্প গ্রহণ বা বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য নতুন নয়। যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে বড় অবকাঠামো গড়ে তোলার ঘটনা ঘটছে, আবার যেখানে প্রয়োজন, সেখানে সেই উন্নয়ন হচ্ছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান বারবার বরাদ্দ পেয়ে যাচ্ছে কিন্তু বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে অধিকতর যোগ্য অনেক প্রতিষ্ঠান।

যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার একটি উচ্চবিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। ফলাফলের দিক দিয়ে উপজেলায় অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েও চরম অযত্ন ও অবহেলার শিকার সেটি। এতে বিদ্যালয়ের পরিবেশগত অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। একটি সফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন করুণ অবস্থা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ে শিশু থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে প্রবেশ করে কারও মনে হবে না এটি উপজেলার একটি সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কারণ, এ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষগুলোতে নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চ, ফ্যান ও লাইটের অবস্থা। নেই শহীদ মিনার। এমনকি নেই কোনো শৌচাগারের ব্যবস্থাও। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে ২৩ বছর আগে ব্যক্তিদানে একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। আর ২০ বছর আগে সরকারিভাবে একটি দোতলা ভবন করে দেওয়া হয়। সেই ভবনগুলো এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

বিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজের জন্য বারবার বরাদ্দ চাওয়া হলেও অজানা কারণে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। এমনকি কয়েক বছর আগে শ্রেণিকক্ষের জন্য বেঞ্চ বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল।

কিন্তু সেই বেঞ্চও পাওয়া যায়নি। কারণ, পরবর্তী সময়ে ওই বরাদ্দ বাতিল হয়ে যায়। শিক্ষকেরা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলছেন, সব বিদ্যালয়ে নতুন ভবন হচ্ছে, পুরোনো ভবনগুলো সংস্কার করে চকচকে করা হচ্ছে। শুধু তাঁদের বিদ্যালয় দিন দিন খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবছর উপজেলা, জেলা পরিষদ, সংসদ সদস্য, জেলা শিক্ষা প্রকৌশলসহ সরকারি দপ্তরগুলোতে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে। তারা দিচ্ছে না। অনেকের কাছে মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি, জিয়াউর রহমানের নামে বিদ্যালয় হওয়ায় আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।’

এতগুলো দপ্তর বিদ্যালয়টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটা অমানবিক। এমপিওভুক্ত হওয়া বিদ্যালয়টি এখন ব্যক্তিগত দানে কোনো রকম টিকে আছে। এভাবে একটি বিদ্যালয় চলতে পারে না।

এতে ভুক্তভোগী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় শিক্ষাবিস্তারে যে সফল ভূমিকা রাখছে, সেখানেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জেলা প্রশাসক বিদ্যালয়টিকে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করছি, তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টাই আমরা দেখব।