দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

দেশে আয়ের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে নারায়ণগঞ্জ। এ জেলায় হতদরিদ্রের সংখ্যা সবচেয়ে কম। সরকারি প্রতিবেদনই বলছে এসব তথ্য। যার কারণে স্থানীয় লোকজন নিজেদের ধনী জেলার বাসিন্দা বলে গর্বও করেন। কিন্তু সেই গর্ব তখন ফিকে হয়ে যায় জেলাটির বিশাল অংশজুড়ে তিতাসের ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস–সংযোগের কারণে।

কয়েক দিন আগে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় একটি টিনশেড বাড়িতে গ্যাসলাইনের ছিদ্র থেকে বিস্ফোরণে এক কিশোরসহ তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। আর কয়েক দিন পরপর রূপগঞ্জ উপজেলায় এমন দুর্ঘটনা ঘটছে।

এরপরও নোয়াপাড়া এলাকায় একটি সড়কজুড়ে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। মাসের পর মাস ধরে এ অবস্থা চললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিতাস কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রতিনিধি—সবাই বিষয়টি জানলেও না জানার ভান করে আছে। ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কে বসবাস করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

জামদানি শিল্পনগরীর সঙ্গে যোগাযোগের প্রধানতম মাধ্যম তারাব খালপাড় সড়ক। এই সড়কের দুই পাশজুড়ে বসবাসকারী বাসিন্দাদের অধিকাংশই জামদানিশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া ছোট-বড় বেশ কিছু কারখানাও রয়েছে। আছে আটটির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এমন ব্যস্ততামুখর সড়কজুড়েই মাসের পর মাস ধরে গ্যাস নির্গমন ঘটছে। মূলত সড়কের নিচ দিয়ে যাওয়া তিতাস গ্যাসের সংযোগ লাইন ফুটো হয়ে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই সড়কে দেখা যায় হাজারো বুদ্‌বুদ। এরই মধ্যে ওই এলাকায় দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত চারজন দগ্ধ হয়েছেন। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তার মানে আরও বড় দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছে কি তিতাস কর্তৃপক্ষ?

তিতাসের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এরশাদ মাহমুদের বক্তব্য, ‘বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। আমরা খোঁজ নিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেব।’ অথচ স্থানীয় লোকজন তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে একাধিকবার মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এ ছাড়া এক মাস আগেও ওই সড়কের এক কিলোমিটারের মধ্যে তিতাসের একটি অফিস ছিল। সংযোগের লাইন ফুটো হওয়া ও গ্যাস নির্গমনের বিষয়টিও তাদের অজানা নয়। স্থানীয় কাউন্সিলরের চলাচলের রাস্তাও সেটি। তিনিও বিষয়টি ভালোমতো জানেন।

২০২০ সালে ফতুল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৩৪ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তিতাসের গ্যাস–সংযোগের ত্রুটির কারণেই ভয়াবহ ঘটনাটির সাক্ষী হয় নারায়ণগঞ্জ।

এরপরও বোধোদয় হচ্ছে না তিতাসের। যার কারণে একের পর এক ছোটখাটো দুর্ঘটনা ও বিস্ফোরণ ঘটেই চলেছে জেলাটিতে। এখন নোয়াপাড়ার সড়কটিতে কি এভাবেই চলতে থাকবে? প্রতিবেদন প্রকাশের এক দিন পার হয়ে গেলেও তাদের কোনো নড়াচড়া নেই।

ফলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তাদের বক্তব্য নিয়ে আমরা সন্দিহান। সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কিন্তু নিতে হবে চোখে ঠুলি পরে থাকা তিতাসকেই।