রাজউক ও দুই সিটি করপোরেশন কী করছে

সম্পাদকীয়

যেখানে ঢাকা মহানগরের ২০ শতাংশ সবুজ থাকার কথা, সেখানে আছে সাড়ে ৮ শতাংশের কম। তদুপরি মহানগরের যেটুকু সবুজ এলাকা আছে, তা–ও কমে যাচ্ছে কংক্রিটের ক্রমবর্ধমান আচ্ছাদনে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল–পরিকল্পনা বিভাগের গবেষণার তথ্য বলছে, ২০০২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বার্ষিক ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সবুজ এলাকা হারিয়েছে ঢাকা।

এ হারে সবুজ হারাতে থাকলে ঢাকা একসময় সবুজহীন নগরে পরিণত হবে। বিমান থেকে নিচের দিকে তাকালেও দেখা যায়, কংক্রিটের জঞ্জাল কীভাবে সবুজ গ্রাস করে ফেলছে।

এর আগে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, বাসযোগ্য শহরের জন্য ন্যূনতম ৩০-৩৫ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত, সবুজ ও জলাভূমি রাখতে হয়। কিন্তু গত ২০ বছরে রাজধানীর ১৩৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার জলাভূমি ও উন্মুক্ত স্থান অনেকাংশে কমেছে, বেড়েছে কংক্রিটের স্থাপনা। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, বর্তমানে রাজধানীর ৮২ ভাগ এলাকা কংক্রিটে আবৃত হয়ে গেছে। আর জলাভূমির পরিমাণ রয়েছে ৪ দশমিক ৩৮ ভাগ। বাকি এলাকার কিছু অংশ উন্মুক্ত, সবুজ ও উন্নয়নপ্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও বিএফডি ঢাকার সবুজ জায়গা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে সবুজ জায়গা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে রাজউকের বিরোধ রয়েছে। সিটি করপোরেশন অনেক ক্ষেত্রে মুনাফা করার জন্য সবুজ জায়গায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।

ঢাকা শহরের যে সবুজ এলাকা আছে,তা–ও সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। অনেক সবুজ এলাকার চারপাশে প্রাচীর। ফলে সেখানে সাধারণ মানুষ যেতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইশরাত ইসলাম বলেন, জাতীয় সম্পদগুলো যখন কোথাও দেওয়া হবে, তখন যাতে সবাই তা ব্যবহার করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পূর্বাচল, বসুন্ধরা ইত্যাদি সরকারি ও বেসরকারি প্লটভিত্তিক এলাকাগুলো, যেগুলো এখনো পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি, সেই সব জায়গায় ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন করা জরুরি। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার।

অত্যধিক জনসংখ্যার কারণে অন্যান্য দেশের শহরের সবুজের সঙ্গে ঢাকার তুলনা করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। কিন্তু অধিক জনসংখ্যার কারণে তো আমরা ঢাকা শহরের সবুজকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না।

ঢাকা শহর নিয়ে যে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে সবুজ অনেকটা রক্ষা করা যেত। ঢাকায় সবুজ আচ্ছাদন বাড়ানো যে অসম্ভব নয়, হাতিরঝিল তার প্রমাণ। দেড় কোটি মানুষ–অধ্যুষিত ঢাকা শহরে আরও অনেক বেশি সবুজ এলাকা থাকা দরকার। উত্তরা, বনানী, গুলশান যখন আবাসিক এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তখন যথেষ্ট সবুজ এলাকা ও জলাশয় রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সেগুলো নষ্ট করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনার মাধ্যমে।

এখনই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সচেতন না হলে ঢাকা শহর সত্যি সত্যি একদিন পুরোপুরি সবুজহীন হয়ে পড়বে। আমরা যদি ঢাকা শহর রক্ষা করতে চাই, এর বাসিন্দাদের মুক্ত বাতাস থেকে বঞ্চিত না করতে চাই, তাহলে সবুজ এলাকা বাড়াতেই হবে। ঢাকার বায়ুদূষণের সঙ্গেও এ সবুজের একটা সম্পর্ক আছে। সবুজ যত কমবে, বায়ুদূষণ বাড়বে। সবুজ যত বাড়বে, বায়ুদূষণ কমবে।