দেশের সব পশু হাসপাতালের জন্য অনুপ্রেরণা

সম্পাদকীয়

দেশে খামারশিল্পের প্রসার ঘটেছে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কৃষকদের পাশাপাশি অনেক তরুণও এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক সাফল্যের বড় উদাহরণ হিসেবেই দেখা যায় বিষয়টিকে। তবে নানা ধরনের সমস্যা ও ভোগান্তি নিয়ে এ খাতকে এগিয়ে নিচ্ছেন খামারিরা।

বিশেষ করে পশুর খাবার ও ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এর মধ্যে আরও বেগ পেতে হয় পশুর চিকিৎসা নিয়ে। এর জন্য উপজেলা পর্যায়ে পশু হাসপাতাল থাকলেও সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টির কারণে অনেকে সেখানে যেতে চান না।

তবে চাইলেই এসব হাসপাতালের পরিস্থিতি বদলে দেওয়া যায়, সেটি দেখিয়ে দিয়েছে নওগাঁর বদলগাছি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। সেখানকার খামারিবান্ধব ভেটেরিনারি হাসপাতালটি এখন সারা দেশের জন্য উদাহরণ তৈরি করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এক বছর আগেও দিনে ছয়-সাতজন খামারি পশুর জন্য সেবা নিতে আসতেন বদলগাছির এ পশু হাসপাতালে। যেটি মূলত অন্য অনেক উপজেলা পশু হাসপাতালের চিত্র। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হকের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে এখন বদলগাছিতে প্রতিদিন শতাধিক খামারি সেবা নিচ্ছেন। কী এমন চমক তৈরি করেছেন নাজমুল হক?

হাসপাতাল কার্যালয়ের ভেতর ও বাইরে তৈরি করেছেন সাজানো-গোছানো পরিবেশ। গড়ে তুলেছেন পেট অ্যান্ড বার্ডস কেয়ার সেন্টার, অপারেশন থিয়েটার, প্রজনন সেন্টার ও অ্যানিমেল শেড। আছে আলট্রাসনোগ্রাম চেম্বার, স্যাম্পল কালেকশন চেম্বার ও ভ্যাকসিন সেন্টারও। প্রাণীর চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগ চালুর মাধ্যমে এ হাসপাতাল এখন আলোচিত। গত বছর দেশে প্রথমবারের মতো প্রাণীদের চিকিৎসায় সার্বক্ষণিক বিনা মূল্যে ‘জরুরি বিভাগ’ চালু করেন নাজমুল হক।

হাসপাতালের কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে বসানো হয়েছে জরুরি সেবা ও তথ্যসহায়তা কেন্দ্র। যার ফলে খামারিদের অনেক ভোগান্তিই কমে গেছে। বসানো হয়েছে একাধিক ডিজিটাল বোর্ড। প্রয়োজনীয় সেবা নিতে খরচের তালিকা থেকে শুরু করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং কর্মীদের মুঠোফোন নম্বরের তথ্য আছে এসব বোর্ডে। উপজেলায় পশুপাখির সংখ্যা ও কোন প্রাণীর কী ধরনের সেবা দেওয়া হয়েছে, তা-ও লেখা আছে বোর্ডে।

উন্নত দেশে যেভাবে পশুপাখির সেবা ও চিকিৎসা দেওয়া হয়, তেমনটি এ দেশেও সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন নাজমুল হক। এর জন্য দরকার শুধু সদিচ্ছা ও কর্মনিষ্ঠা। সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে এমনটিই প্রত্যাশা করেন।

ইতিমধ্যে বদলগাছি ভেটেরিনারি হাসপাতালকে মডেল হিসেবে ধরে অন্য উপজেলায় সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে নিঃসন্দেহে খামারিরা উপকৃত হবেন। বদলে দেওয়ার কারিগর নাজমুল হকের প্রতি আমাদের অভিবাদন।