শ্রমিক অসন্তোষকে অগ্রাহ্য করবেন না

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি যখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে আলোচিত, তখন নতুন মজুরিকাঠামো অনুযায়ী মজুরি না দেওয়া এবং মজুরি স্তর সমন্বয় নিয়ে শ্রমিকদের অসন্তোষের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নতুন মজুরিকাঠামো অনুযায়ী বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। বেশির ভাগ কারখানায় নতুন মজুরিকাঠামো বাস্তবায়িত হলেও কিছু কারখানার মালিক গড়িমসি করছেন। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি ও যথাযথভাবে গ্রেড বা স্তর সমন্বয়ের দাবিতে গত এক সপ্তাহে গাজীপুরের অন্তত ১০টি কারখানায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। গত সোমবার একটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাভারের একটি কারখানার একটি ইউনিট বন্ধ আছে। অন্যদিকে শ্রমিক বিক্ষোভের জের ধরে সাভার ইপিজেড এলাকায় পাঁচটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে চারটি পরে খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সাভারে শ্রমিক অসন্তোষের জের ধরে আরেকটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। 

উল্লেখ্য, গত বছরের শেষের দিকে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের নতুন মজুরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়, যাতে ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয় ১২ হাজার টাকা। আগের কাঠামোয় ন্যূনতম মজুরি ছিল ৮ হাজার টাকা। নতুন মজুরিকাঠামোয় শ্রমিকদের মজুরি স্তর সাত থেকে চারটিতে নামিয়ে আনায় জ্যেষ্ঠ শ্রমিকেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের মজুরি নবীনদের সমান হয়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে নতুন মজুরিকাঠামোর প্রতিবাদে সে সময় বিক্ষোভ হয়, যাতে একজন নারীসহ দুজন শ্রমিক নিহত হন।

এত সব ঘটনা-দুর্ঘটনার পরও যদি কারখানার মালিকেরা নতুন মজুরি বোর্ড বাস্তবায়নে টালবাহানা করেন এবং গ্রেড সমন্বয়ের নামে শ্রমিকদের ঠকাতে চান, সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা বলেছেন, ৯৫ শতাংশ কারখানায় নতুন মজুরিকাঠামো বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু বাকি ৫ শতাংশ কারখানায় কেন বাস্তবায়িত হলো না? 

তৈরি পোশাক কারখানা পরিচালনার যে ব্যয়, সে তুলনায় শ্রমিকদের মজুরি খুবই কম। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে মাসে ১২ হাজার টাকা দিয়ে যে কোনো শ্রমিক চলতে পারেন না, সেটাও মালিকদের বুঝতে হবে। নতুন মজুরিকাঠামোয় স্তর কমিয়ে জ্যেষ্ঠ শ্রমিকদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে, যা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। সমস্যাটির ন্যায়সংগত সমাধান জরুরি। এ ক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার হরণ নিয়ে বহির্বিশ্বে উদ্বেগ জানানো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ লক্ষ্যবস্তু হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ অবস্থায় কোনোভাবে তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ জিইয়ে রাখা ঠিক হবে না। কোনো একটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে তা অন্যান্য এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়তে পারে। অতীতে এ রকম ঘটনা অনেক ঘটেছে।

নতুন মজুরিকাঠামো নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে এমনিতেই অসন্তোষ আছে। তাঁরা অনেকটা নিরুপায় হয়েই এটি মেনে নিয়েছেন। এরপরও যদি মজুরিকাঠামো নিয়ে টালবাহানা করা হয়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেও যেতে পারে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ, সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং কারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে বন্ধ কারখানাগুলো অবিলম্বে খুলে দেওয়া হোক।