চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে বুনো হাতির আবাসস্থল যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, তাতে হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত অনিবার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের কারণে সাত হাজার একর বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এ ছাড়া বিগত সরকারের সময় নেওয়া রেললাইনসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগে বনভূমি সংকুচিত হয়েছে। ফলে হাতির চলাচলের প্রাকৃতিক রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। খাদ্যের সংকটেও পড়েছে হাতিগুলো। এ বাস্তবতায় হাতি আর মানুষের সংঘাতের ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।
গত সাত বছরে উখিয়া ও টেকনাফে ২২টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরেই মারা গেছে সাতটি হাতি। দুর্ঘটনা ও অসুস্থতায় মৃত্যুর পাশাপাশি ফাঁদ পেতে, গুলি করে ও বৈদুতিক শক দিয়ে হাতি হত্যার ঘটনা থেমে নেই। গত ছয় বছরে সেখানে হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৫ জন।
বন বিভাগের তথ্যমতে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে বর্তমানে ২৫ শাবকসহ হাতির সংখ্যা ২০৩। একটি হাতিকে প্রয়োজনীয় খাবার ও পানির জন্য ৭০ কিলোমিটার হাঁটাচলা করতে হয়। আশ্রয়শিবির, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কারণে হাতির প্রাকৃতিক চলাচলের রাস্তা এবং খাদ্য ও পানির জোগানস্থল কমে গেছে। এভাবে বন উজাড়ের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে হাতিগুলো।
কক্সবাজারে হাতি চলাচলের প্রাকৃতিক করিডর আছে আটটি। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কারণে তিনটি করিডর বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘুমধুম সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কারণে আরও দুটি করিডর বন্ধ হয়ে গেছে। আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের জ্বালানির প্রয়োজনেও বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। সব মিলিয়ে নিজেদের আবাসভূমিতেই অস্তিত্ব নিয়ে হুমকিতে পড়েছে হাতি। খাদ্য ও পানিসংকট এবং বিচরণের প্রাকৃতিক করিডর হারানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই লোকালয়ে চলে আসছে হাতি। হত্যার শিকার হচ্ছে।
হাতি সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার অঙ্গীকার কাগজে–কলমে থাকলেও বাস্তবে তার উদ্যোগ দেখা যায় কমই। বন উজাড় প্রতিরোধ ও বনভূমি পুনরুদ্ধারে সরকারকে অবশ্যই জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস করার কারণে শুধু হাতির অস্তিত্বই বিপন্ন হচ্ছে তা নয়, মানুষের জীবনও হুমকিতে পড়ছে। কক্সবাজারের হাতি রক্ষায় বন্ধ হয়ে যাওয়া করিডরগুলো উন্মুক্ত করা এবং পাহাড়ি ছড়া ও ঝরনাগুলোয় পানি রাখা জরুরি। অঞ্চলটিকে ঘিরে নেওয়া বিগত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকেও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
সর্বোপরি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হাতি ও মানুষের সহাবস্থানের উপায় খুঁজে বের করাটাই সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প।