ঈদের আগেই সমুদয় পাওনা পরিশোধ করুন

সম্পাদকীয়

প্রতিবছরই ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। অধিকাংশ মালিক ঈদের আগে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে থাকেন। আবার ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে কোনো কোনো মালিকের কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার মন্দ নজিরও আছে। এসব ক্ষেত্রে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি শিল্পাঞ্চলগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধসংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়; যাতে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় শিল্পাঞ্চলে ঈদের আগে বেতন-বোনাসকে কেন্দ্র করে সমস্যা হতে পারে, এমন ৪১৬টি কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে। আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেট—এ আট শিল্প–অধ্যুষিত এলাকায় মোট কারখানার সংখ্যা ৯ হাজার ৪৬৭।

সভায় শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো গার্মেন্টমালিক বেতন-ভাতা দিতে ব্যর্থ হলে বিকল্প উপায় বের করার অনুরোধ জানানো হয়। ঈদের আগে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কোনো অবস্থায়ই শ্রমিক ছাঁটাই বা লে অফ না করার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়।

এদিকে ২৯ মার্চ শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকেও ঈদের আগে শ্রমিকদের বোনাস ও বেতন দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলো ২০ রোজার আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করার দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও জানিয়ে দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

সরকারের এই কঠোর বার্তা কাজে আসবে কি না, সেটা নির্ভর করে মালিকদের ওপর। উল্লিখিত ৪১৬টি কারখানায় যাতে শ্রমিকদের বেতন–বোনাস নিয়ে কোনো সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিকল্প পথ বের করতে হবে। অতীতে এ ধরনের সমস্যাসংকুল কারখানার মালিক যাতে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারেন, সে জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হতো। এবারও প্রয়োজনে তাদের সহায়তা দিতে হবে।

যে শ্রমিকদের ঘামে-শ্রমে শিল্পকারখানা চালু আছে এবং মালিকেরা মুনাফা করছেন, কোনোভাবে তাঁদের ঠকানো যাবে না। যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা কম। সেটাও যদি তাঁরা নিয়মিত না পান, তাহলে এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে কীভাবে চলবেন?

আমরা আশা করতে চাই, প্রতিটি কারখানায় ঈদের আগে বোনাস ও মার্চ মাসের বেতন মালিকপক্ষ পরিশোধ করবে। ঈদের আগে কোনো কারখানার শ্রমিকেরা বেতন–বোনাস না পেলে পুরো শ্রমিক অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা ও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। মালিকদের মধ্যে একটা প্রবণতা হলো, ছুটির আগের দিন বেতন–ভাতা দেওয়া হয়।

সব কারখানামালিক এই নীতি অনুসরণ করলে শ্রমিকেরা ভীষণ বিপদে পড়বেন। একসঙ্গে সবাই বাড়ি রওনা দিলে ভোগান্তি বাড়বে। আবার অনেক মালিক শ্রমিকেরা ছুটির পর আসতে দেরি করতে পারেন, এই অজুহাতে বেতন বকেয়া রাখেন। এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল শ্রমিক স্বার্থবিরোধী নয়, অমানবিকও।

এবার শ্রমিকদের বেতনকাঠামো ঘোষণার সময় তাঁদের রেশনিং সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে, কিন্তু সেটি এখনো চালু হয়নি। এ বিষয়ে সরকার অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি।