ভোটার সইয়ের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হোক

নির্বাচন কমিশন মে মাসে চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম দফায় ৪ মে, দ্বিতীয় দফায় ১১ মে, তৃতীয় দফায় ১৮ মে এবং ২৫ মে চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। 

২০১৬ সাল থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়ে আসছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী এলাকার ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক সইযুক্ত একটি তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। 

এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ২৫০ জন ভোটারের সই নেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, সেটা শিথিল করার চিন্তাভাবনা করছে বলে প্রথম আলোয় খবর এসেছে। ইসির আইন সংস্কারবিষয়ক কমিটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালায় কিছু সংশোধনী আনার জন্য একটি খসড়া তৈরির কাজ করছে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান শিথিল করার পাশাপাশি জামানতের টাকার পরিমাণ বাড়ানো এবং জামানত রক্ষার জন্য প্রাপ্ত ভোটের হার বাড়ানোর বিষয় রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার বিষয় আলোচনায় রেখেছে ইসির সংশ্লিষ্ট কমিটি।

নির্বাচনটি দলীয় প্রতীকে না হওয়ায় সব প্রার্থীই স্বতন্ত্র হিসেবে গণ্য হবেন। ব্যক্তিগতভাবে তঁারা কোনো দলের নেতা–কর্মী কিংবা নির্দলীয় ব্যক্তি হতে পারেন। ২০১৫–এ স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন সংশোধনের আগপর্যন্ত সব স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনই নির্দলীয়ভাবে হতো। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে বিভিন্ন মত ও পথের মানুষের মধ্যে যে সৌহার্দ্যবোধ ও সংহতি ছিল, সেটা অনেকটাই নষ্ট হয়েছে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন করায়। দেরিতে হলেও আওয়ামী লীগ বিষয়টি অনুধাবন করেছে ধারণা করি। কিন্তু তারা যদি জাতীয় নির্বাচনের মতো কেবল ভোটটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে এই কৌশল নিয়ে থাকে, তাতে স্থানীয় সরকার লাভবান হবে না। সংবিধান অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বা স্বশাসনকে শক্তিশালী করতে হলে শাসনব্যবস্থায় বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। 

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হওয়া উচিত এবং প্রার্থীদের জন্য ভোটারের সইয়ের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া উচিত। যেসব দেশে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হয়, সেখানে সংসদীয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। মেয়র ও কাউন্সিলরদের আলাদা ভোট হয় না। সবাইকে প্রথমে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনটি করেছে সংকর পদ্ধতিতে। সিটি মেয়র, ইউপি বা উপজেলা চেয়ারম্যানরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করলেও কাউন্সিলর ও সদস্যরা নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। 

উপজেলা নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে হলে জাতীয় নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতা–কর্মীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে দলীয় নেতৃত্ব নমনীয় হতে পারে। প্রথম আলোর কাছে বিএনপির একাধিক নেতা সে রকম আভাসই দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে আলাদা কোনো কৌশলের প্রয়োজন হবে না। প্রকৃতপক্ষেই সেটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। ড. তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে একমত হয়ে আমরাও বলতে চাই, কেবল উপজেলা নয়; সব স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে করা হোক এবং ভোটারদের সইয়ের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হোক।