সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেন ভুক্তভোগী হবেন

সম্পাদকীয়

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগে যথেষ্ট ঘাটতি আছে। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উন্নত ও যথাযথ ইন্টারনেট সুবিধা থাকবে না, তা কল্পনাতীত। কিন্তু সেটিই এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গতানুগতিক চিত্র। কেন এমনটি ঘটছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে তার একটি কারণ পাওয়া যায়। সেখানে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীদের কারণে ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

ভয়াবহ তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। এর জন্য আবাসিক হলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ দরকার। কিন্তু দেখা গেছে, মাস্টারদা সূর্য সেন হলে তিন সপ্তাহ ধরে ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সংযোগ নেই। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ কিছু শিক্ষার্থীর বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়া ও আর্থিক লেনদেনের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ক্যাম্পাস ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা এবং হল শাখার শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা মিলে কয়েক মাস আগে ইন্টারনেট সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেওয়ার জন্য হলে নিয়ে আসেন। সেই হলে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল কবিরও। কিন্তু অর্থ লেনদেন ও বিনা মূল্যে সংযোগের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। অথচ ছাত্রলীগের নেতাদের দাবি, টাকা ছাড়া সংযোগ বেশির ভাগই রয়েছে অরাজনৈতিক ছাত্রদের কক্ষগুলোতে।

এ বিষয়ে সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ জাকির হোসেন ভূঁইয়ার বক্তব্য, হল প্রশাসন সাধারণত ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করে না বা এর সঙ্গে যুক্ত হয় না। এ ধরনের কোনো নিয়মও নেই। ছাত্ররা নিজেদের মতো করেই ব্যবস্থা করেন। ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যাটা তাঁরাই সমাধান করবেন। একজন আবাসিক শিক্ষককে এর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে। তিনি বিষয়টি দেখভাল করবেন।

তাঁর এ বক্তব্য ধরে প্রশ্ন রাখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবতা কী বলে? সেখানকার আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররা নিজেদের সমস্যার সমাধান নিজেরা করতে পারেন? প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনেই আমরা দেখি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলোতে কীভাবে ছাত্রলীগের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। সেখানে কোনো ধরনের ন্যায্য প্রতিবাদও করা যায় না, উল্টো নিপীড়ন তো আছেই।

হল প্রশাসন সেসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কী করে ইন্টারনেটের এ সমস্যার সমাধান করবেন? হল প্রশাসন কেন এর দায়িত্ব নেবে না? সাধারণ শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রমে ভুক্তভোগী হচ্ছেন, এর জন্য হল কর্তৃপক্ষ কিছু করবে না, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।