নাটোরে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেওয়া সরকারের প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে লাখো অসহায় পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ প্রকল্প এখনো চলমান। ফলে আরও বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন মানুষের স্থায়ী ঠিকানা হবে।

কিন্তু দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অনিয়মের কারণে কোথাও কোথাও এ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুরুর দিকে এ প্রকল্প নিয়ে এমন অভিযোগ উঠলে কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এরপরও আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের খবর জানা যাচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।

সর্বশেষ নাটোরের গুরুদাসপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে ঘুষ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে সেখানে ঘুষ গ্রহণকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন ভুক্তভোগীরা। এরপর ঘুষের টাকা ফেরত দিতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজেই সেখানে জড়িয়ে পড়েছেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে নাটোরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অন্তত সাত নারীর কাছ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই ঘর পেয়েছেন। এরপর তাঁরা সবাই ঘুষের টাকা ফেরত চাইছিলেন।

একপর্যায়ে গত বুধবার দুজন ভুক্তভোগী নাটোর আমলি আদালতে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূর মোহাম্মদ ইউএনওর কার্যালয়ে অভিযোগকারীদের বক্তব্য শোনেন। যদিও সেখানে নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না। তবে তিনি ভুক্তভোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানান, ইউএনওর মধ্যস্থতায় ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

গত শুক্রবার ইউএনওর মধ্যস্থতায় ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়া হয়। বিষয়টি গোপন রাখতে কয়েকজন ভুক্তভোগী নারীকে ইউএনওর বাসার পেছন দিক দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেয়াল টপকাতে ব্যবহার করা হয় মই। যদিও সে সময় স্থানীয় সাংবাদিকেরা সেখানে উপস্থিত হন। তাঁদের সামনে গোটা বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে অভিযোগকারী নারীরাও সংবাদকর্মীদের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেন এবং ঘুষের টাকা বুঝে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।

ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। বিচারকার্য নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ইউএনওর এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তিনি নিজেই।

সেখানে এভাবে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টিও তাঁর কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেখানে ঘুষ গ্রহণকারীর বিরুদ্ধে ইউএনওর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, সেখানে সহযোগী হলেন তিনি। আমরা আশা করব, গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।