শ্রমিকের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়

দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য অন্যতম জেলা হচ্ছে ঠাকুরগাঁও। কোনো কোনো বছর খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকে এ জেলায়। আবহাওয়া আর মাটির ধরনের কারণে ধান, গম, আলু ও সবজি উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ ঠাকুরগাঁও।

এ জেলা থেকে প্রায় এক হাজার চালকলমালিক সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করেন। এ জন্য জেলাটিতে দেড় হাজারের বেশি চালকল গড়ে উঠেছে। কিন্তু চালকলগুলোয় নেই যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা। এ কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এতে শিকার হচ্ছেন দরিদ্র শ্রমিকেরা।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুৎ দাসপাড়া এলাকায় এক চালকলে বয়লার বিস্ফোরণে মা–মেয়েসহ এক পরিবারের তিন শ্রমিক মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন শিশু। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই পরিবারের আরও দুজন।

বয়লার বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনা ঠাকুরগাঁওয়ে এবারই প্রথম নয়। এর আগে জেলাটিতে চালকলে বয়লার বিস্ফোরণের তিনটি বড় ঘটনা ঘটে। ২০১৩ সালে ঠাকুরগাঁও রোড এলাকায় এক বিস্ফোরণে তিনজন নিহত ও তিনজন আহত হন। ২০১৮ সালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বয়লার বিস্ফোরণে একজন নিহত হন। ২০২০ সালে সদর উপজেলার রাজাগাঁও এলাকায় বয়লার বিস্ফোরণে একজন নিহত ও আটজন আহত হন। এ ছাড়া প্রায় সময় ছোটখাটো ঘটনা নিয়মিতই ঘটে থাকে চালকলগুলোয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মালিকপক্ষের অবহেলার কারণে বয়লারে এ বিস্ফোরণে ঘটনাগুলো ঘটছে। বয়লারে বাষ্প নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বাল্ব থাকে। এর ফলে বাষ্প অতিরিক্ত হলে তা বের করে দেওয়া যায়। কিন্তু অনেক চালকলে সেই বাল্ব না থাকায় বাষ্প নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

এতে বিস্ফোরণসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। একটি চালকল চালুর জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র লাগে। দেখা যাচ্ছে, চালকলমালিকদের কেউ কেউ এই অনুমোদন ও ছাড়পত্রের ধার ধারেন না। আবার অনেকে অনুমোদনপত্র নবায়ন করেন না।

দাসপাড়া এলাকায় যে ঘটনা ঘটেছে, তা অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার পর চালকলমালিক পালিয়ে গেছেন। এর আগের প্রাণহানির ঘটনাগুলোর জন্যও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, কারও শাস্তিও হয়নি। ফলে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে চলছে ঠাকুরগাঁওয়ের চালকলগুলো।

গত বৃহস্পতিবারের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে আছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং কারখানা পরিদর্শক ও ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তদন্ত কমিটি এখন কী করে, সেটি দেখার অপেক্ষা। আমরা ঠাকুরগাঁওয়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। এ ছাড়া চালকলগুলোয় শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক। সেখানে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানাই।