অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

সারের দাম বেড়ে গেছে, বেড়ে গেছে ডিজেলের দামও। এ নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সার ও ডিজেলের বাড়তি ব্যয়ের কারণে উৎপাদন খরচ তোলাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের জন্য। কিন্তু সারের দাম বাড়লেও সেই সার কি ঠিকঠাকমতো পাচ্ছেন তাঁরা? জেলায় জেলায় গুদামে সার পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের অনিয়ম নতুন নয়। সেটিই আমরা দেখতে পাচ্ছি যশোরে। এখন আমন ধানের ভরা মৌসুমে এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সারের জন্য বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে হচ্ছে সেখানকার কৃষকদের। সারের সংকট নেই, আবার সেই সার পাচ্ছেন না কৃষক। এমন পরিস্থিতিতে চাষাবাদ কীভাবে করবেন তাঁরা। এর ফলে কি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না?

মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত আমন ধানের চারা রোপণের সময়কাল। এ সময়ে অ-ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয়, যার একটি হচ্ছে এমওপি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার বেশি এমওপি সার খুলনায় মজুত রয়েছে। ওই সার পরিবহন করে যশোর গুদামে না আনায় কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন ঠিকাদারেরা টিএসপি ও ডিএপি সার পৌঁছে দিলেও এমওপি পৌঁছানো হচ্ছে অল্প অল্প করে।

যশোর গুদামে সার পরিবহনের দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকাভিত্তিক পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্স এবং কুষ্টিয়া ট্রেডিং এজেন্সি। এসব প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা বলছেন, সারের সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অথচ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সারের সংকট নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোই এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তারা ঠিকঠাকমতো সার পৌঁছে দিচ্ছে না গুদামে। অবৈধভাবে খোলাবাজারে বা মাছের খামারগুলোতে সার বিক্রি করে দিতে এমন কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তারা। বিশেষ করে মাছের ঘেরে সার বিক্রি করে বেশি দাম পাওয়া যায়। মাছের ঘেরে সরকারের সার বরাদ্দ না থাকায় এমন সুযোগ নিয়ে থাকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এর কারণে বঞ্চিত হন কৃষকেরা। বগুড়ার ধুনট উপজেলায়ও চাহিদা অনুযায়ী সার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা। গত বুধবার সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

সার পরিবহনে ঠিকাদারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) প্রভাবশালী নেতারাই এমন অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত বলে আমরা জানতে পারছি। সংগঠনটির কাছে সরকারি কর্মকর্তারাও অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়েন, কেউ কেউ সুবিধাও নেন। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্যনিরাপত্তার অনিশ্চয়তার মধ্যে কৃষি খাতই আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসার স্থল। সেখানে কোনো ধরনের অনিয়ম কাম্য নয়। যাঁরা সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।