জন্মনিবন্ধন নিয়ে অনিয়মের শেষ কোথায়

সম্পাদকীয়

ডিজিটাল সেবার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের ভোগান্তি কমানো। কিন্তু জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে সেটি বরং দিন দিন আরও বেড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে আমরা কয়েকবার সম্পাদকীয় লিখেছি। সরকারের ঊর্ধ্বতনেরাও বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এরপরও মিলছে না সমাধান।

দালাল চক্র সেখানে সর্বেসর্বা হয়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ ছাড়া সেটি যে কোনোভাবে সম্ভব নয়, তা–ও কারও অজানা নয়। যেহেতু কোথাও কোনো জবাবদিহির বালাই নেই, ভোগান্তির সমাধান নিয়েও কারও সদিচ্ছা নেই। দুঃখজনক হচ্ছে, সমস্যাকে জিইয়ে রাখতে রাখতে সেটিকেই নিয়মে পরিণত করে ফেলা হয়েছে।

জন্মনিবন্ধনের কাজে এতটাই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে যে একজন দোকানির হাতে পর্যন্ত সরকারি সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, যশোরের শার্শা উপজেলার এক দোকানি দোকানে বসেই করছিলেন জন্মনিবন্ধন তৈরির কাজ। তাঁর কাছে ছিল সরকারি সার্ভারের পাসওয়ার্ড।

ফলে দোকানে বসেই সারা দেশের যেকোনো ঠিকানায় অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংযুক্ত ও সংশোধন করতেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৭ সালে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিভাগের এক সাবেক প্রোগ্রামারের কাছ থেকে পাওয়া লিংক ও পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে তিনি এ কাজ করে আসছিলেন।

প্রায় ছয় হাজার মানুষের জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংযুক্ত করেন ওই দোকানি। তাঁর মতো আছেন আরও কয়েকজন। চট্টগ্রাম নগরে জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন নেওয়ার ঘটনার তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে আসে।

 জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে মানুষের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে, সরকারি সার্ভার ডাউন থাকে। সে কারণে দালালদের কাছে যেতে বাধ্য হন তাঁরা। দালালেরা অর্থের বিনিময়ে অল্প সময়ের মধ্যে কাজটি করে দেন।

এ নিয়ে অক্টোবর মাসে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস পালন উপলক্ষে ক্ষোভও প্রকাশ করেন ঢাকার দুই মেয়র। তঁাদের বক্তব্যেই উঠে আসে, দিনের বেলা জন্মনিবন্ধনের সার্ভার ডাউন থাকে, কখনো বন্ধও থাকে। ওই সময় লোকজন নিবন্ধন করতে পারেন না। আবার রাতে সার্ভার ঠিক থাকে। তখন ‘নিশাচর দালাল’দের হাতে জন্মনিবন্ধনের কাজটি দিয়ে দেন।

পাঁচ বছর ধরে একটি সার্ভার যখন একই পাসওয়ার্ডে চলতে থাকে, তাতেই বোঝা যায় সেখানে প্রযুক্তিগত সুরক্ষা কতটা নাজুক। তাতে সার্ভার ডাউন হয়ে থাকাই তো স্বাভাবিক। ফলে দালাল চক্রও অবৈধভাবে সেই সার্ভারে ঢুকে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে এভাবে নিরাপত্তাহীন করে রাখা কেন? এত অভিযোগ, অসন্তোষ, ক্ষোভ—এরপরও কেন জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি নিয়ে এই অবহেলা? সরকারি নীতিনির্ধারকদের কাছে বলব, আমরা এর শেষ চাই। অসাধু কর্মকর্তাসহ গোটা দালাল চক্রটিকেই অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক।