বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বহু মানুষ জটিল ও প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়েও নিয়মিত ওষুধের নিশ্চয়তা পান না। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধের ঘাটতি, দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা ও আর্থিক অবস্থা—সব মিলিয়ে চিকিৎসা পাওয়া অনেকের জন্যই অনিশ্চিত। সে বাস্তবতায় সুস্থ মানুষকে জালিয়াতির মাধ্যমে রোগী বানিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর ঘটনা গুরুতরই বলতে হবে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দিনাজপুরে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ভুয়া রোগী তৈরি করে তাঁদের যক্ষ্মার ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে এবং কফের নমুনা জালিয়াতির মাধ্যমে পরীক্ষার ফল বিকৃত করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ব্র্যাক পরিচালিত যক্ষ্মা নির্ণয়কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তাকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
যক্ষ্মার মতো সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় রাষ্ট্র, বেসরকারি সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জনগণের আস্থা গড়ে ওঠে। ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে অনিয়মের এমন অভিযোগ জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
সিভিল সার্জনের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, রোগীর সংখ্যা বেশি দেখানোর উদ্দেশ্যে সুস্থ ব্যক্তিদের যক্ষ্মারোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রকৃত রোগীর কফের নমুনা ব্যবহার করে পরীক্ষার ফল জাল করার অভিযোগও রয়েছে। এর ফলে যাঁদের যক্ষ্মা নেই, তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী ওষুধ গ্রহণ করতে হয়েছে, যার গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটি চিকিৎসা নীতিমালার চরম লঙ্ঘন এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী কর্মকাণ্ড।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে পরিত্যক্ত ওষুধ, নিয়মবহির্ভূত মজুত এবং নথিপত্রে অসংগতি ধরা পড়েছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, কার্যকর নজরদারি ও স্বচ্ছতা না থাকলে জনস্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি সহজেই বিস্তার লাভ করতে পারে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো অভিযানের পর ব্র্যাকের মাঠপর্যায়ের সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়া। এতে অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের পরিবর্তে সাধারণ মানুষেরই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সিভিল সার্জনের ধারণা, স্থানীয় দু–একজন কর্মকর্তা বা কর্মী এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় ব্র্যাক অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আমরা আশা করব বেসরকারি সংস্থাটি তদন্তপ্রক্রিয়ায় জবাবদিহির বিষয়টি যথাযথভাবে নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্ব হলো এ ধরনের কর্মসূচিতে নিয়মিত তদারকি জোরদার করা এবং অংশীদার সংস্থাগুলোর ওপর নজরদারি বজায় রাখা।
আমরা আশা করি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার এনে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করা হবে।