নগরবাসীর যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা হোক

সম্পাদকীয়

নিত্য যানজটের ঢাকা শহরে প্রায় প্রতিদিনই সভা–সমাবেশ লেগে আছে। ফলে ঘরে থেকে বের হওয়া এবং ঘরে ফেরা মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। পৃথিবীর আর কোনো দেশে জনগণকে জিম্মি করে এ রকম কর্মসূচি নেওয়া হয় বলে আমাদের জানা নেই। অবশ্য বহু বছর আগে ঢাকা শহরে মুক্তাঙ্গন নামে একটি গণপরিসর তৈরি করা হয়েছিল পুরানা পল্টন ও নূর হোসেন চত্বরে। কিন্তু সেটিও দখল হয়ে গেছে।

বুধবার অফিস চলাকালে শাহবাগ ও কারওয়ান বাজারে বেশ কয়েকটি সমাবেশ হয়, যা সম্পর্কে যাত্রীরা আগে থেকে জানতেন না। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁরা সড়কের ওপরই আটকে থাকেন। চার দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান করে বিক্ষোভ করছেন ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) শিক্ষার্থীরা। বেলা একটার কিছু সময় পর ‘সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ’–এর ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নেন। এর আগে কারওয়ান বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে পৌঁছান তাঁরা।

তাঁদের দাবিগুলো হচ্ছে দশম গ্রেডে শূন্য পদে নিয়োগ, কর্মসংস্থান ও সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে নতুন পদ তৈরি, কোর্স কারিকুলাম সংশোধন ও ইন্টার্নশিপ ভাতা, প্রস্তাবিত এলাইড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড বাতিল করে স্বতন্ত্র মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও বিএমঅ্যান্ডডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ।

এদিকে কলিং ভিসায় গত বছরের ৩১ মে তারিখের মধ্যে মালয়েশিয়া যেতে না পারায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে মহাসমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন প্রবাসে যেতে আগ্রহী কর্মীরা। তাঁরা কারওয়ান বাজার মোড়ে অবস্থান করে এফডিসি ও পান্থপথমুখী সড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা জানান, প্রায় ১৮ হাজার কর্মী কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। তাঁদের সবাই প্রায় ৫ লাখ টাকা করে দিয়েছেন। সব প্রক্রিয়া শেষ করেও বিদেশে না যেতে পেরে এখন কষ্টে জীবন যাপন করছেন।

গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকা শহরে সড়ক বন্ধ করে সভা–সমাবেশ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের হিড়িক পড়েছিল। সচিবালয়ের সামনেও অনেক সংগঠনকে বিক্ষোভ–সমাবেশ করতে দেখা গেছে। এসব কারণে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ আগস্ট ডিএমপি থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছিল, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ থাকবে। 

কিছুদিন সেই নিষেধাজ্ঞা বহালও ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ফের বিভিন্ন সংগঠন রাজপথ বন্ধ করে সভাবেশ করতে থাকে, যা নগরবাসীর যন্ত্রণা ও দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে আগাম কোনো খবরও দেওয়া হচ্ছে না। 

একটি আধুনিক শহরে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা, ঢাকায় আছে ৮ শতাংশের মতো। আবার এই সড়কের একাংশ নানা স্থাপনা ও মালামাল দিয়ে ভরে রাখা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ব্যস্ততম সড়কটি উন্মুক্ত সমাবেশস্থলে পরিণত হয়েছে।

এটা কোনোভাবে চলতে দেওয়া যায় না। নিত্যযানজটের এ শহরে সড়ক বন্ধ করে কোনো সভা–সমাবেশ চলতে পারে না। প্রয়োজনে সরকার মুক্তাঙ্গনের মতো কোনো নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে দিক, যেখানে মানুষ একত্র হয়ে তাদের দাবিদাওয়া ও অভাব–অভিযোগের কথা জানাতে পারেন। ঢাকা শহবের জনজীবন সচল রাখতে সড়কগুলো সব ধরনের আপদ থেকে মুক্ত রাখার দায়িত্ব ডিএমপি তথা সরকারেরই।