প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিন

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে যত মানুষ আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন, তঁাদের মধ্যে বিষখেকোদের সংখ্যাই বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিনের বরাতে প্রথম আলো জানিয়েছে, সারা দেশে বছরে বিষক্রিয়ায় ৬৪ হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। অর্থাৎ দৈনিক ১৭৫ জন বিষপানে হাসপাতালে আসছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রতিবছর আত্মহত্যায় ১০ থেকে ১৪ হাজার মানুষ মারা যান। এর মধ্যে সর্বাধিক মৃত্যু হয় বিষ খেয়ে। উদ্বেগের বিষয় হলো বিষ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতালে নেই।

প্রথম আলোর খবরে আরও জানা গেছে, দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৩৪ জন বিষপানের রোগী উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া ভেজাল মদের বিষক্রিয়ায় পাঁচজনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একসময় ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায় বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ছিল। হাসপাতালের রোগী ভর্তির হিসাবে দাকোপ ঝিনাইদহের শৈলকুপাকে ছাড়িয়ে গেছে। শৈলকুপা উপজেলা হাসপাতালে গত বছর ৭৭ জন বিষ খাওয়া রোগী ভর্তি হন, সেখানে দাকোপ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫৯ জন রোগী।

এমআইএসের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে দেশের ৪৯৫টি উপজেলা হাসপাতালে ২২ হাজার ১১০ জন বিষক্রিয়ার রোগী ভর্তি হন। ২০২৩ সালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ হাজার ৪৪২ জনে দাঁড়ায়। ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৩৬৭ জন। এর বাইরে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালেও বিষক্রিয়ার অনেক রোগী ভর্তি হন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যাঁদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি, তাঁদের আত্মহত্যার প্রবণতা বিষণ্নতা নেই, এমন মানুষের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এই বিষণ্নতা নানা কারণে আসতে পারে। দারিদ্র্য, ব্যক্তিগত অসফলতা, বিষণ্নতা, পারিবারিক নির্যাতন ও কলহ কিংবা সামাজিক অপমান থেকে মানুষ আত্মহত্যা করেন এবং এ ক্ষেত্রে বিষই তাঁদের প্রধান অবলম্বন হয়ে থাকে।

টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এম এ ফয়েজ বলেছেন, অতি ক্ষতিকর কীটনাশক বিশ্বের অনেক দেশই নিষিদ্ধ করেছে। আমরাও মনে করি, এটা বন্ধ করা উচিত। কৃষিপণ্য উৎপাদন কিংবা অন্য কোনো কারণে যদি এসব উপাদান প্রয়োজন হয়, সেটা করতে হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে।

আত্মহত্যার সহজ উপাদান হিসেবে কেউ যাতে কীটনাশক, আগাছানাশক ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে এসব উপাদান বসতবাড়ির বাইরে রাখতে হবে। তারপরও যদি কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা চালান, তঁাদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। বিষ খাওয়া রোগীদের বাঁচাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।