গাছ বাঁচিয়েই শহীদ মিনারের নকশা হোক

সম্পাদকীয়

তীব্র তাপপ্রবাহের সময় গাছ রক্ষা নিয়ে জোরালো আলোচনা ওঠে। এর মধ্যেও দেশে নানা জায়গায় গাছ কাটার ঘটনা দেখা গেছে। সরকারি উন্নয়নের কাজেই বেশির ভাগ গাছ কাটা চলছে। গাছ না কেটেও চাইলে উন্নয়ন করা যায়—সে ধারণা কোনোভাবেই আমাদের নীতিনির্ধারক ও প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাথায় ঢুকছে না। ফলে কোনো প্রকল্পের শুরুতে কোপ পড়ে কোনো না কোনো গাছের গায়ে। রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণেও কিছু গাছ কাটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ। তাদের এ আশঙ্কায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর রাজশাহী শহরে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। এ সিদ্ধান্ত নাগরিক সমাজ স্বাগত জানিয়েছে। রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের বিপরীতে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করবে জেলা পরিষদ। তবে শহীদ মিনারটি বানাতে গিয়ে ১০টির বেশি শতবর্ষী গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কাটার জন্য চিহ্নিত গাছগুলোর মধ্যে কোনোটির বয়স ১০০ বছর, কোনো কোনো গাছের বয়স তার চেয়েও বেশি। ফলে শতবর্ষী এসব গাছ রাজশাহীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যেরই অংশ। শুধু তা–ই নয়, প্রকৃতিতে বছরের পর বছর ধরে অবদান রেখে যাচ্ছে গাছগুলো। শত বছর ধরে যে পরিমাণ অক্সিজেন দান করেছে গাছগুলো, তার অর্থমূল্য নির্ণয় করা সম্ভব নয়। গাছগুলো কাটলে যে ক্ষতি হবে, নতুন গাছ লাগানো হলেও তা পূরণ হওয়ার নয়।

চলতি বছরের রেকর্ড মাত্রার তাপপ্রবাহে নগরবাসীর কাছে গাছগুলো স্বস্তির আশ্রয় হিসেবে কাজ করছে। ফলে এসব গাছ কাটা হবে, তা কোনোভাবেই মানতে পারছে না স্থানীয় নাগরিক সমাজ।

শহীদ মিনার নির্মাণ অবশ্যই জরুরি। সেটির মাধ্যমে নতুন ও আগামী প্রজন্ম আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ভাষাশহীদদের ত্যাগ ও মাতৃভাষা রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে। তবে প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা করেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন।

নাগরিক সমাজের দাবি, গাছগুলো রক্ষা করেই শহীদ মিনারের নকশা করা হোক। এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা পরিবেশসচিব, স্থানীয় সরকারসচিব, রাজশাহী সিটি মেয়র ও রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদনপত্র দিয়েছেন। এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তিকে দেওয়া এই আবেদন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হবে বলে আমরা আশা প্রকাশ করছি।

গাছ না কেটেই রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা করা হোক। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের মেলবন্ধন তৈরি করার মধ্য দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃষ্টান্ত তৈরি হোক, সেটিই কাম্য।