কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিন

তাপপ্রবাহ কমে যাওয়ায় যেখানে চট্টগ্রামবাসীর স্বস্তি পাওয়ার কথা, সেখানে ৬ মের এক ঘণ্টার বৃষ্টি তাঁদের অবর্ণনীয় ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে। ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি কিংবা গাছ ভেঙে পড়লে দ্রুত অপসারণ করা সম্ভব হলেও বৃষ্টির পানি সরানো যায়নি খাল–নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে। 

গত বছর বৃষ্টিতে ১৩ বার চট্টগ্রাম নগরী ডুবেছে। এবার বৃষ্টির মৌসুম শুরু না হতেই নগরবাসী উদ্বিগ্ন। তাঁদের প্রশ্ন, মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়ার পরও কেন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। ৮ মে প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হলেও এবার সে ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। 

জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দুটি, সিটি করপোরেশন একটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। প্রকল্পগুলোর কাজে সমন্বয় আনতে ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে প্রতিবছর সমন্বয় ও পর্যালোচনা সভা করা হলেও এবার সে রকম কিছু হয়নি। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে বলেছেন, সিডিএর শীর্ষ পদে রদবদলের কারণে বৈঠক হয়নি, শিগগিরই হবে। সিটি করপোরেশন নগরীর নালা–নর্দমা পরিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা সরেজমিনে কয়েকটি স্থানে দেখতে পেয়েছেন, নালা–খাল ময়লা–আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে।

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন সংস্থা চারটি প্রকল্প নিলেও কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। চার প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। ৭ থেকে ১০ বছর আগে নেওয়া প্রকল্পগুলো তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও দফায় দফায় বরাদ্দ ও সময় বাড়ানো হচ্ছে। ১০ বছর আগে কোনো প্রকল্প নেওয়া হলে সেই সময়ের বাস্তবতা ও এখনকার বাস্তবতা এক নয়। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সিডিএকে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ কেন দেওয়া হলো, সেই প্রশ্নেরও জবাব নেই। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) ঠিকভাবে না করে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কোন খাতে কত ব্যয় হবে, তারও সঠিক পরিকল্পনা ছিল না। নকশায় ছিল নানা ত্রুটি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেছেন, কোনো কাজই নির্ধারিত সময়ে হয়নি। এমনকি রেগুলেটরের অবকাঠামো হলেও পাম্প মেশিন বসানো হয়নি। সে ক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা গতবারের চেয়ে বাড়ার আশঙ্কা আছে।

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা ও প্রকল্পের কাজের নানা অসংগতি নিয়ে গত বছর অক্টোবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে কী কাজ হয়েছে, তার আউটপুট চাই। শুধু মিটিং আর রেজল্যুশনের কথা শুনতে চাই না। এগুলো শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত।’

মন্ত্রীর ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশও যে প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চৈতন্যোদয় ঘটাতে পারেনি, ৬ মের এক ঘণ্টার বৃষ্টিই তার প্রমাণ। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার বৃষ্টি আরও বেশি হবে। এ ক্ষেত্রে তিন সংস্থাকে বৈঠক করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। একে অপরের ওপর দায় চাপানোর পুরোনো অভ্যাস পরিহার করে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে তারা কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেবে আশা করি।