স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ জরুরি

সম্পাদকীয়

গ্রামাঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি, সংঘর্ষ, খুনোখুনি নতুন কিছু নয়। তবে অনেক সময় বছরের পর বছর ধরে বিরোধ চলতে থাকে। জমিসংক্রান্ত বিষয় থেকে শুরু করে একেবারে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে এক গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে এমন বিরোধ এখন নিজেদের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষে জড়িয়ে গ্রেপ্তারের ভয়ে নারী-পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রাম। অন্যদিকে শত শত একর জমির ধান কাটা বন্ধ হয়ে পড়েছে। ধান নষ্ট হলে অনেকের জীবনে আরও সংকট তৈরি হবে, তাতে সন্দেহ নেই। ফলে এ বিষয়ে একটি উদ্যোগ জরুরি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার সড়ক যোগাযোগবিচ্ছিন্ন পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে গত বৃহস্পতিবার এ সংঘর্ষ ঘটে। গ্রামের দুই বাসিন্দার মধ্যে ধান শুকানোর ২০ শতাংশ খাসজমি নিয়ে চার বছর ধরে বিরোধ চলছে। সেই খাসজমি নিয়ে পুরো গ্রামের লোকজন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এমনকি আশপাশের গ্রামের মানুষও দুই পক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন।

দুই পক্ষের লোকজনই দা-বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে এ সংঘর্ষে জড়ায়। জেলা সদর ও সরাইল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করে। সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। পুলিশ বাদী হয়ে উভয় পক্ষের ১৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে। এর মধ্যে পুলিশ ৪০ জন নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় কয়েক শ জনকে। এখন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ধরতে প্রতিদিন পুলিশ গ্রামটিতে অভিযান চালাচ্ছে। সে ভয়ে পুরো গ্রামের মানুষ ঘরশূন্য করে পালিয়েছে।

জনমানবশূন্য হয়ে পড়া গ্রামটিতে অনেকের কাটা ধান মাঠে পড়ে আছে। অনেকের পাকা ধান জমিতে ঝরে পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেকেরই জীবন চালাতে বড় ধরনের সমস্যা হবে। কারণ, এটি হাওর এলাকা, এখানে শুধু একটি ফসলই হয়ে থাকে। এ ছাড়া গ্রামে অনেক শিক্ষার্থী আছে, তারাও ঘরছাড়া। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে।

পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য অনুসারে, পুরো গ্রামের নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী সবাই সংঘর্ষের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। গ্রামটিতে ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। সে হিসাবে জনসংখ্যা আরও বেশি। এখন অজ্ঞাতনামা আসামি ধরতে গিয়ে পুরো গ্রামের সব মানুষকে হয়রানি করারও সুযোগ নেই। শিক্ষার্থী ও অল্প বয়সীরা ঘরছাড়া থাকবে, সেটিও কাম্য নয়।

ফলে শত শত একর জমির ধান কাটার জন্য পুলিশকেই সহযোগিতা করতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের উদ্যোগে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এ ছাড়া বিরোধ মেটাতে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতারও উদ্যোগ নেওয়া হোক।