স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দোকানগুলো বরাদ্দ দিন

সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদমাধ্যমের আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে। কিন্তু সেটা একাডেমিক পড়াশোনা কিংবা গবেষণার কারণে নয়। বরং ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নানা কর্মকাণ্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের কারণে। সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম আলোর খবরের শিরোনাম হয়েছিল মহাপরিকল্পনাকে পাশ কাটিয়ে স্থাপনা নির্মাণের খবরে। 

প্রশ্ন উঠতেই পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য যখন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে, তখন আলাদা করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে কেন? মহাপরিকল্পনায় ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে সেখানেই সব ধরনের অস্থায়ী দোকান ও রেস্তোরাঁ রাখার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যুক্তি হলো, মহাপরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সে কারণেই অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য তারা অনুমোদন দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই যুক্তি অবশ্যই যৌক্তিক, শিক্ষার্থীদের স্বার্থও এখানে জড়িত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নির্মাণের পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও অস্থায়ী এই দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি? 

২০২২ সালের শেষের দিকে ক্যাম্পাসের পাঁচটি পয়েন্টে ১৫টি দোকান ও রেস্তোরাঁ নির্মাণ শুরু করে প্রশাসন। গত বছরের মার্চ মাসে সেমি পাকা টিনশেডের এসব স্থাপনার নির্মাণ শেষ হয়। ব্যয় হয় প্রায় ৭৬ লাখ টাকা। স্থাপনা নির্মাণের কয়েক মাস আগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ধশতাধিক দোকান উচ্ছেদ করে প্রশাসন। কিন্তু কয়েক দিন পর আবার যত্রতত্র ভ্রাম্যমাণ দোকান বসতে শুরু করে। এসব দোকানে খাবারের মান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অতিরিক্ত দাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তাতে নানা অসুখে-বিসুখে ভুগতেও হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তথ্য বলছে, গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২১ দিনে ১৩১ জন শিক্ষার্থীর শরীরে জন্ডিস শনাক্ত হয়েছিল।

দোকানগুলো নির্মাণের পরও চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পছন্দের লোকদের যাতে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার জন্য ছাত্রলীগ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে তদবির করা হচ্ছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ধরনের কোনো তদবিরের প্রসঙ্গ অস্বীকার করেছে। 

অস্থায়ী এই খাবারের দোকানগুলোতে খাবারের মান, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দাম শিক্ষার্থীদের নাগালের মধ্যে থাকা আবশ্যক। সে কারণে প্রশাসনের নজরদারি থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। দোকানগুলোর বরাদ্দ নিয়ে রাজনৈতিক চাপও রয়েছে। এ ধরনের চাপে নতি স্বীকার করে কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে আপস করা হবে। সে ক্ষেত্রে দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাদের মধ্যে দোকান ও রেস্তোরাঁ বরাদ্দ দেওয়ার স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের স্বার্থে নির্মিত দোকানগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দোকানগুলো চালু করতে দ্রুত উদ্যোগ নেবে বলে আমরা আশা করি।