বেতন ও ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়া হোক

সম্পাদকীয়

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। সেখানে প্রকাশ পাচ্ছে, শিক্ষকদের উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার অগ্রগতি সম্ভব নয়। প্রশ্ন হলো শিক্ষকদের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত ও কাজে কতটা প্রতিফলিত হয়? শিক্ষকেরা অবহেলিত থাকবেন, এটাই যেন এ দেশে প্রতিষ্ঠিত। ফলে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে এমন এক শিক্ষককে আমরা দেখা পাই, যিনি ২০ বছর ধরে বেতন না পেতে পেতে হতাশায় বিপর্যস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। একজন শিক্ষকের জীবন কেন এমন দুর্দশাপূর্ণ হবে?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কাজীপুর উপজেলার জিসিজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক রোকেয়া খাতুন গত রোববার রাতে মারা যান। স্বজনদের অভিযোগ, ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করার সময়ে এ শিক্ষককে কোনো বেতন দেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে হতাশায় রোকেয়া খাতুনের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। রোকেয়া বেগম ২০০৪ সাল থেকে এখানে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন।

রোকেয়া খাতুনের ওপর আরও অবিচার করা হয়েছে। সেই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে শুরুতে যুক্ত ছিলেন রোকেয়ার স্বামী আবদুল করিমও। বেতনের কথা বলে তাঁদের দুজনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। একপর্যায়ে স্বামী সেই বিদ্যালয় ছেড়ে দিলেও থেকে যান রোকেয়া। এরপর একইভাবে আশ্বাস দিয়ে তাঁর কাছ থেকে দফায় দফায় চার লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। এ ঘুষ নেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাজীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ।

রোকেয়া বেগমের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দুজনই। তাঁরা বলেছেন, রোকেয়ার টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের ঘর তোলার কাজ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান এমপিও করাতেও সে টাকা খরচ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে এমপিওভুক্ত হয় এবং আটজন শিক্ষক এতে অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু রোকেয়ার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েও তাঁকে এমপিওভুক্ত করা হয়নি।

৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, এখানে ঘুষ নিয়ে একটি অপরাধ করেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে ঘুষ নিয়েও বেতনের ব্যবস্থা না করে রোকেয়ার সঙ্গে তাঁরা এক প্রকার প্রতারণাও করেছেন। ফলে এ শিক্ষকের মৃত্যুতে তাঁদের দায় আছে।

রোকেয়া বেগম ২০ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছেন। এত বছরের বেতনও তাঁর প্রাপ্য। শুধু ঘুষের টাকা ফেরতই নয়, তাঁর বকেয়া সব বেতনও স্বজনদের কাছে পরিশোধ করা হোক। এ ঘটনার জন্য প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানাচ্ছি।