পাউবোর এমন কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়

সম্পাদকীয়

দেশের নদীগুলো যে ভালো নেই, সেটি আমরা সবাই জানি। পরিচিত ও বড় নদীগুলো বেশি আলোচনায় আসে। কিন্তু নদীমাতৃক এ দেশের মানচিত্রে শিরা-উপশিরার মতো যেসব উপনদী, শাখানদী ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে, সেগুলোও যে হারিয়ে যেতে বসেছে, তা অনেকটা অগোচরেই থেকে যায় বলা যায়।

সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, সরকারিভাবেই নদী-খাল ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। নদী রক্ষার কাজে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্তৃপক্ষ হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু এ সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেশজুড়ে অনেক শাখানদী হত্যা করেছে তারা।

সম্প্রতি উন্নয়নের নামে সাতক্ষীরার ছোট যমুনা নদীকেও মেরে ফেলার আয়োজন করেছে পাউবো। ছোট যমুনা এখন আর নদী নেই। পাউবো সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, নদীটি এখন খাল। এভাবে একটি নদী খাল হয়ে যায়, খাল হয়ে যায় নালা। একটা সময় সেটি পুরোপুরি অস্তিত্বহীন হয়ে যায়। পাউবোর এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদী পুনঃখননের কাজ নিয়ে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে নদীর দুই পাড় দখলমুক্ত না করেই এ প্রকল্প চলছে। নদী ছিল ২৫০-৩০০ ফুট। বর্তমান শিডিউল অনুযায়ী, নদী খনন করা হচ্ছে ৮০-১০০ ফুট। ফলে নদী পুনঃখননের নামে খাল বানানো হচ্ছে।

প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, যেভাবে পুনঃখনন করা হচ্ছে, তাতে ছোট যমুনাকে দেখে কোনোভাবেই মনে হয় না, সেটি একটি নদী। এ ছাড়া দুই প্রান্তে এক্সকাভেটর দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে পলিমাটি তুলে নদীর পাড়েই রাখা হচ্ছে। একটু জোরে বৃষ্টি হলেই ওই মাটি ধসে পুনরায় ভরাট হয়ে যাবে নদী।

ফলে প্রকল্পের পুরো অর্থই তখন পানিতে চলে যাবে। গত বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই খননকাজ আগামী ৩০ মের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। যদিও ধীরগতির কাজের কারণে সঠিক সময়ে প্রকল্পটি শেষ হবে কি না, সন্দেহ রয়েছে। তবে তার চেয়ে এই প্রশ্ন তোলাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ছোট যমুনার জন্য এমন একটি আত্মঘাতী প্রকল্প কেন নেওয়া হলো?

নদীর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, বাস্তবতাবিবর্জিত ও ভুল পরিকল্পনার এসব প্রকল্প পাস কীভাবে হয়, কী করে হয়? ঠিকাদারকে কোটি কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেওয়া, অসাধু কর্মকর্তাদের তার ভাগ নেওয়া, নদী দখলে স্বার্থান্বেষী মহলকে সুযোগ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকেই কি জেনেবুঝে ও ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কাজ করছে? পাউবোর এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ হোক। খননের নামে ছোট যমুনা নদীর প্রকৃতি বদলানোর কোনো সুযোগ নেই।