সীমিত আয়ের মানুষ যাবে কোথায়

প্রতিবছর দেখা যায়, রোজা ও ঈদের কারণে যেসব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়, ঈদের পর তা কমতে থাকে। কিন্তু এবার ঈদের পরও পেঁয়াজ, আলু, ডিম, ভোজ্যতেল ও মসলার দাম বেড়ে চলেছে। ফলে সীমিত আয়ের মানুষকে আরও বেশি দুর্ভাবনায় ফেলেছে। 

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বাজারে ঈদের পর নতুন বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মালিবাগ, রামপুরা ও কারওয়ান বাজারে মূলত সরবরাহের সংকটে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বেড়েছে। মানভেদে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যে দেশি রসুন প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছিল, বৃহস্পতিবার তা ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ঈদের পর প্রতি ডজন ডিমে দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম চার টাকা বাড়ছে। প্রায় একই হারে বাড়ছে বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দামও। তবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে দুই টাকা কমানো হয়েছে। এ ছাড়া সুপার পাম তেলের নতুন দামও নির্ধারণ করা হয়েছে।

এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১৬৭ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতল ৮১৮ টাকা। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ভোজ্যতেলের ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) প্রত্যাহারের মেয়াদ শেষ হওয়ার যুক্তি দেখিয়েছেন। 

তাহলে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কেন বাড়ল? এর আগে আমদানি শুল্ক কমানোর পরও চিনিসহ অনেক পণ্যের দাম না কমার তিক্ত অভিজ্ঞতাও ভোক্তাদের নিতে হয়েছে। 

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, চালের দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল রোজার আগে থেকে। এ ক্ষেত্রে মিলের মালিক ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কথা শোনা গেলেও সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা যায় না। প্রতিবছরই সরকারের পক্ষ থেকে ধান ও চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান ও চাল কেনা হয় না। এতে কৃষক অর্থাৎ উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবার তার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আশা করা যায়। 

নিত্যপণ্যের দাম যখন বাড়তির দিকে, তখনই মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বাজছে। ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের ওপর হামলা চালিয়েছে। যদি সত্যি সত্যি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য সরবরাহে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাড়তে পারে জ্বালানির দামও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, হুতি বিদ্রোহীদের কারণে বৈশ্বিক পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে নৌরুট সীমিত হয়ে পড়েছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বাড়লে বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

যেখানে বর্তমান বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত, পণ্যের দাম বাড়লে তাঁরা কোথায় যাবেন? সরকারের উচিত বাজারে চাল, আটা, তেলসহ অতি প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়ানো, যাতে কিছুটা কম দামে এগুলো দরিদ্র মানুষ পেতে পারেন। আর এই কার্যক্রম শহর এলাকায় সীমিত না রেখে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে দিতে হবে। 

গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসরায়েলে ইরানের হামলা-পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তার ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা মনে করি, জ্বালানির পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে সেই নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।