জেলা প্রশাসক মহোদয়ের একটু সময় হবে কি

গ্রেট ব্রিটেনে ১৮৫০ সালে গণগ্রন্থাগার আইন পাস হলে ব্রিটেন ও তাদের সাম্রাজ্যের অধীন অঞ্চলগুলোয় এক এক করে পাঠাগার গড়ে উঠতে শুরু করে। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষকে জ্ঞান লাভে উদ্বুদ্ধ করা এবং সময় কাটানোর সুযোগ করে দেওয়া। বাংলাদেশেও সে সময় চারটি পাঠাগার হয়েছিল। এরপর এই সংখ্যা আরও বাড়ে। পাঠাগার হয়ে ওঠে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সূতিকাগার। 

দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়তে মানুষ যেমন এসব জায়গায় জড়ো হতেন, তেমনি পাঠাগার থেকে বই ধার করে বাড়িতে নিয়ে পড়ার প্রচলনও ছিল। এখনো বাংলাদেশে হাজারের ওপর গ্রন্থাগার আছে। স্থানীয় উদ্যোগে গড়া এসব পাঠাগার পরিচালনায় কমিটি আছে। কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক, সদস্য এলাকার গণ্যমান্য, বিদ্যোৎসাহী লোকজন। সরকারি কিছু অনুদান, স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় এসব পাঠাগারের পরিচালনা ব্যয় মেটার কথা। কিন্তু প্রায় দুই দশক ধরে পাঠাগারগুলোর দিকে কারও তেমন নজর নেই। অনেক জায়গায় জমজমাট পাঠাগারগুলো পোড়া বাড়ির মতো কোনোরকম টিকে আছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঠাগার এমন ধুঁকে ধুঁকে চলা স্থাপনা এখন। প্রথম আলোর খবর বলছে, ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক বেতন পাচ্ছেন না গত ২০ মাস। হকারের কাছে ১১ মাসের পত্রিকার বিল বাকি। বেতনের অভাবে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন পাঠাগারের অফিস সহায়ক। দুই মেয়াদ পার হলেও নতুন কমিটি হয়নি। ১০–১২ বছর ধরে এই পাঠাগারে কোনো নতুন বই কেনা হয়নি। মাত্র ১৬ জন বাড়িতে পড়ার জন্য বই নিয়ে গেছেন। আর জেলা প্রশাসক পদাধিকারবলে এই কমিটির প্রধান হলেও তিনি জানেন না পাঠাগারের এই দশা।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের দায়িত্ব বেসরকারি পাঠাগারগুলোর দেখভাল করা। তারা আকার-আকৃতিভেদে পাঠাগারগুলোয় অনুদানও দিয়ে থাকে। কিন্তু এই অনুদান খুবই অপর্যাপ্ত। পাঠাগার উদ্যোক্তারা বহুদিন ধরে অনুদান বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁরা বলছেন গ্রন্থাগারগুলোকে যে টাকা দেওয়া হয়, তাতে দুই মাসও চলে না। তাঁরা চান অন্তত একজন গ্রন্থাগারিকের বেতন যেন সরকারিভাবে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের দাবির প্রতি সাড়া দেয়নি কেউ। 

দেশে এখন কোটিপতি, শতকোটিপতির ছড়াছড়ির খবর প্রায়ই শোনা যায়। দেশ সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডের মতো হয়ে গেছে বলেও রাজনৈতিক নেতারা দাবি করেন। পাঠাগারগুলো রক্ষায় তাঁদের খুব ভূমিকা আছে, এমন দাবি কি তাঁরা করতে পারেন? পাঠাগার নিয়ে এই অমনোযোগ দুঃখজনক। বাংলাদেশের শিশু-কিশোর-তরুণদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইসের আসক্তি বিপজ্জনক মাত্রায় গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পাঠাগার আমাদের মুক্তির পথ দেখাতে পারে। পাঠাগারকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়াতে পারে, সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হচ্ছে না।