আঞ্চলিক পরিষদকে কার্যকর করা হোক

২৭ মে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটিতে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, তাতে সরকারের নীতিনির্ধারক, সাবেক মন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্বশীল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে আশার কথা, তাঁরা দুজনই পাহাড়ে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা মান–অভিমান ভুলে দুই পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে বলেছেন।

সেই সঙ্গে তাঁকে এ কথাও স্বীকার করতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। চুক্তির অন্যতম সইদাতা জনসংহতি সমিতি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন, চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে আসছে। চুক্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে আলাদা ভোটার তালিকা করে জেলা পরিষদের নির্বাচন করার কথা ছিল, যা গত আড়াই দশকেও বাস্তবায়ন হয়নি। এখন ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিদের নিয়েই মূলত জেলা পরিষদ গঠিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ অকার্যকর করে রাখা হয়েছে বলে পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা যে অভিযোগ করেছেন, তা ভিত্তিহীন বলার সুযোগ নেই। বাহারি নাম দেওয়া হয়েছে আঞ্চলিক পরিষদ। বাস্তবে তার অবকাঠামো, বিধিমালা বলতে কিছু নেই। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, ২৫ বছরেও কেন বিধিমালা, জনবলকাঠামো চূড়ান্ত করা হলো না? এর জন্য নিশ্চয়ই জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করা যাবে না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে পার্বত্য এলাকার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রক্ষার কথা বলা হয়েছিল। বাস্তবতা হলো সেই স্বকীয়তা এখন নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িরা স্বদেশে পরবাসী না হলেও সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে পাহাড়িদের ভূমি সমস্যারও সমাধান হয়নি। এমনকি ভূমি কমিশন সেখানে বৈঠকও করতে পারছে না চুক্তিবিরোধীদের হরতাল–অবরোধের কারণে। 

আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর। এরপরও তারা সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিল। মাঝখানে সাত বছর বাদে গত সাড়ে ১৫ বছর ফের আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আছে। যে রাজনৈতিক দলগুলো চুক্তির বিরোধিতা করেছে, তারা চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি করতে পারে, কিন্তু চুক্তির অন্যতম সইদাতা আওয়ামী লীগ সরকার কেন করবে? ২ ডিসেম্বর এলেই সরকার প্রতিবছর চুক্তির কত ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে, তার ফিরিস্তি দেয়। অন্যদিকে জনসংহতি সমিতি চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এটা মোটেই সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার লক্ষণ নয়। 

শুরু থেকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একাংশ ও মূলধারার কিছু রাজনৈতিক দল চুক্তির বিরোধিতা করে আসছিল। চুক্তি বাস্তবায়নে যত বিলম্ব হবে, চুক্তিবিরোধী শক্তি মাঠ গরম করার সুযোগও তত বেশি পাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝেমধ্যেই যে সংঘাতের ঘটনা ঘটে, তার মূলেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া। সরকারের উচিত হবে চুক্তির বাকি ধারাগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। ২৫ বছর ধরে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ বিধিমালা ছাড়া চলাটাও কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।