সবার কাছে ডিজিটাল সেবা পৌঁছাতে হবে

সম্পাদকীয়

সরকার যখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে, তখন তথ্যপ্রযুক্তিতে আমরা খুব এগিয়েছি, সে কথা বলা যাবে না। স্মার্ট বাংলাদেশ বলি আর ডিজিটাল বাংলাদেশ বলি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যখন এ সেবার আওতায় আসবে, তখনই এ উদ্যোগ সফল বলে দাবি করা যাবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহার জরিপে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা মোটেই আশাপ্রদ নয়। জরিপে দেখা যায়, দেশে ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর অর্থ ইন্টারনেট, স্মার্টফোনভিত্তিক সেবার বাইরেই থেকে গেছে গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষ। দেশের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষের নিজস্ব মুঠোফোন আছে।

এর মধ্যে ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ ও ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ নারী। কিন্তু ব্যক্তিপর্যায়ে স্মার্টফোন ব্যবহৃত হয় প্রায় ৩১ শতাংশ, দিনে অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী, দেশের মানুষের আইসিটি দক্ষতায় বলা হয়েছে, ৮৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ তথ্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরানোর জন্য কপি পেস্ট করতে পারে এবং ডিজিটাল দুনিয়ায় কনটেন্ট ও তথ্য ব্যবহার করতে পারে। ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বার্তা পাঠাতে পারে। এ ছাড়া দক্ষতায় সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে প্রোগ্রামিং বা কোডিংয়ে—মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

পরিবারভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে মুঠোফোন ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ৫২ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারে স্মার্টফোন ব্যবহৃত হয়। ল্যান্ডফোন ব্যবহার কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশে। পরিবারে কম্পিউটার ব্যবহারের পরিমাণ ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয় ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ পরিবারে। তথ্যপ্রযুক্তির মূল দুটি উপাদান স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটে কেন আমরা পিছিয়ে আছি? প্রথমত, সরকার এ সেবা গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে ডিজিটাল সেবা নেওয়ার জন্য বেশ অর্থ দিতে হয়।

এখনো বাংলাদেশ জনসংখ্যার ২০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে; ইন্টারনেট সেবা যাদের সামর্থ্যের বাইরে। এমনকি দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে যারা বাস করছে, তাদের পক্ষেও এ সুবিধা নেওয়া সম্ভব হয় না। বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চলে ইন্টারনেট, মুঠোফোন ও স্মার্টফোন ব্যবহার যে কম, তারও কারণ দারিদ্র্য। অন্যদিকে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মুঠোফোন ও স্মার্টফোনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। অর্থাৎ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সেবার সঙ্গে আর্থিক সংগতির বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তাতে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব সরকারি সেবা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি খাতের সেবা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেকেলে পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। উদাহরণ হিসেবে থানায় জিডির কথা বলা যায়। যেখানে ইন্টারনেটে জিডি করার বিধান আছে, সেখানে কেন সেবাপ্রার্থীকে কম্পিউটার থেকে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে হাতে হাতে থানায় গিয়ে দিয়ে আসতে হবে?

সত্যিকার ডিজিটাল বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে ইন্টারনেট সেবা আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলো যদি কম দামে সেবা দিতে পারে, আমরা কেন পারব না? এ খাতে বাজেটে আরও বেশি বরাদ্দ রাখতে হবে।

জোর দিতে হবে মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপরও। শতভাগ না হোক, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতেই হবে। অন্যথায় ডিজিটাল বা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।