অবিলম্বে অচলাবস্থা কাটুক

সম্পাদকীয়

মানুষ যখন অন্য হাসপাতালে ভরসা পান না, তখন চোখের চিকিৎসার জন্য দেশের সেরা প্রতিষ্ঠান জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসেন। এই বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

গত ২৮ মে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাধারণ রোগী ও  হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘর্ষ-মারামারির পর সেখানে সব ধরনের সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ভর্তি রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। হাসপাতালের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী ছুটিতে যান বা যেতে বাধ্য হন। ঈদের ছুটির আগে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৫৪ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিন-চারজন ছাড়া অন্য সবাই বাড়ি চলে গেছেন। তবে তাঁদের কেউ হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে যাননি। ঈদের ছুটির এক দিন আগে জরুরি বিভাগ চালু করা হলেও অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ আছে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গতকাল বুধবার পর্যন্ত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে অচলাবস্থা দূর হয়নি। ঈদের ছুটি শেষে তাঁরা (আহত ব্যক্তিরা) আবার হাসপাতালে ফিরে এলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চোখের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ৪ জুন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আহত ব্যক্তিদের চোখ পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। ওই দিন ৫৪ জন আহত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ৩০ জন বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে চোখ পরীক্ষা করান। অন্য ২৪ জন চোখ দেখাতে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে যাননি।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ও হাসপাতালে ছিলেন, তাঁরা চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করেছেন। আবার আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা কার্যক্রমে বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের। বিশেষজ্ঞ কমিটিও তাঁদের ছাড়পত্র দিতে বলেছে।

বিশেষজ্ঞ কমিটি রোগীদের প্রদত্ত চলমান চিকিৎসা সন্তোষজনক বললেও আপাতত রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে প্রয়োজনে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ইস্পাহানি হাসপাতালে যোগাযোগ করা এবং রোগীদের দ্রুত পুনর্বাসনের কথাও বলেছে তারা।

যেকোনো হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের সঙ্গে রোগীর আস্থার সম্পর্ক থাকতে হয়। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।’ কিন্তু তাঁরা যে প্রস্তুতিই নিক না কেন, কাজটি করতে হবে রোগী ও তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে।

এর আগে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য কে বেশি দায়ী—রোগী না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সেই বিতর্কের চেয়েও জরুরি হলো অবিলম্বে সেখানে চিকিৎসার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেখানে একটি পক্ষ, সেখানে তাদের উদ্যোগ সফল না–ও হতে পারে। উদ্যোগটি আসতে হবে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। কাজটি করতে হবে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে। কারও ওপর একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

আহত ব্যক্তিদের অনেকে এখানে সুচিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের পছন্দসই হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে তাতে তাঁরা বিরোধিতা করবেন না বলে ধারণা করি। দেশের সেরা চক্ষু হাসপাতালটিতে আর এক দিনের জন্যও অচলাবস্থা চলুক, সেটা কাম্য নয়।