বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে নতুন যাত্রা শুরু হোক

সম্পাদকীয়

গত আগস্টে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম। পাহাড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বান্দরবান জেলা। জেলা শহরের কোনো এলাকায় ভবনের দুই তলা পর্যন্ত পানি উঠে যায়।

অনেক দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিজমি ডুবে গিয়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাহাড়ধসে উপজেলাগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বান্দরবান সরকারি গণগ্রন্থাগার। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলেও গ্রন্থাগারটিকে আগের অবস্থায় কোনোভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

একটি গ্রন্থাগার মানে শুধু বইয়ের সমাহার নয়। একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার হচ্ছে অতীত ও বর্তমানের একটি সেতুবন্ধ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘লাইব্রেরি’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘কে জানিত মানুষ অতীতকে বর্তমানে বন্দি করিবে?

অতলস্পর্শ কালসমুদ্রের ওপর কেবল এক একখানি বই দিয়া সাঁকো বাঁধিয়া দিবে।’ বান্দরবান সরকারি গণগ্রন্থাগার ছিল তেমনই একটি পাঠাগার। সেখানে ছিল ২৮ হাজার বই এবং ৩৫ বছরের সংরক্ষিত পত্রিকা। কিন্তু আগস্টের বন্যায় সবকিছুই এখন নষ্ট হয়ে গেছে, যা পাঠের উপযোগী করা সম্ভব হচ্ছে না।

সম্প্রতি জেলা শহরের নোয়াপাড়া এলাকায় গ্রন্থাগারটিতে গিয়ে প্রথম আলোর প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা দেখতে পান, একতলা ভবনের বারান্দা, পাঠকক্ষসহ সবখানেই ভেজা ও কাদাযুক্ত বই এবং পত্রিকার স্তূপ। ভবনের বাইরেও শুকানোর জন্য রাখা হয়েছে বেশ কিছু বই। এসব বইয়ের পাতা ওলটানোর মতো অবস্থাও নেই। কিছু বই এখনো পুরোপুরি শুকায়নি, এখনো লেগে আছে কাদার প্রলেপ। ক্ষতিগ্রস্ত বইগুলোকে পাঠ উপযোগী করে তুলতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন গণগ্রন্থাগারের কর্মকর্তারা। তবে বেশির ভাগ বইয়েরই পরিত্যক্ত ঘোষণা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না তাঁরা।

১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি গণগ্রন্থাগারটি। ২০১৯ সালের বন্যায় ও বিভিন্ন সময় কয়েক হাজারের মতো বই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এ গ্রন্থাগার ছিল পত্রপত্রিকার মূল্যবান একটি আর্কাইভ। এখানে সংরক্ষণ ছিল ৩৫ বছরের বিভিন্ন পত্রিকা। আর্কাইভটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।

এটি নিঃসন্দেহে বড় একটি ক্ষতি। এমন আর্কাইভ নতুন করে গড়ে তোলা দুঃসাধ্য ব্যাপার। গণগ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক বলছেন, নতুন করে বই রাখা ও সংবাদপত্র সংরক্ষণের জন্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রন্থাগারের সংস্কার করা জরুরি। নতুন করে গ্রন্থাগারে সহস্রাধিক বই এলেও তা খোলা সম্ভব হচ্ছে না।

আমরা আশা করব, যাবতীয় সংস্কারের মাধ্যমে গ্রন্থাগারটি আবারও চালু করা হবে। বইয়ের একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে জাতীয় গ্রন্থাগার কেন্দ্রসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবে, সেটিই আমাদের কামনা।