সংঘাতের পথেই যাচ্ছে রাজনীতি?

সম্পাদকীয়

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচি নিয়ে যে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল, লক্ষ্মীপুরে কৃষক দলের এক কর্মী নিহত হলেন, সারা দেশে কয়েক শ মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি জনজীবনে যে সীমাহীন ভোগান্তি নেমে এল, এর জবাব কী।

বেশ কিছুদিন বিভিন্ন দলের কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে আছে। কিন্তু সেই উত্তাপ এত দ্রুত সংঘাতে রূপ নেবে, তা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল। দুই দিনের অঘটনের জন্য সরকার বিরোধী দলকে দোষারোপ করতে পারে, বিরোধী দলও সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে অভিযুক্ত করতে পারে, কিন্তু তাতে মানুষ ও সম্পদের যে ক্ষতি হলো, তা পূরণ হবে না।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, অন্তত সাতটি জেলায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও বিএনপির পদযাত্রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে, কোথাও আওয়ামী লীগ হামলা করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার প্রতিটি দলের আছে। কিন্তু সেই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কেন সংঘাত-সংঘর্ষ হবে? কেন এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর চড়াও হবে? 

বিএনপি প্রথম ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে পদযাত্রার কর্মসূচি নেয়। আওয়ামী লীগ একই সময়ে প্রায় একই ধরনের কর্মসূচি না নিলে হয়তো এই সংঘর্ষ এড়ানো যেত। আওয়ামী লীগ যা করেছে, সেটা অনেকটা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার শামিল। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে তারা নিজেদের রাজনৈতিক জবরদস্তিই প্রকাশ করল।

শান্তি রক্ষার দায়িত্ব সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সেই দায়িত্ব তারা যে নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করেছে না, সেটা পরিষ্কার। সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখা যায়, ১৮ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন স্থানে বিএনপির পদযাত্রায় বাধা দিয়েছে। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাও যোগ দিয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেসব হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন।

বিএনপি সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সংবিধানের অধীন নির্বাচনের দাবিতে অনড়। তারা বলেছে, সংবিধান থেকে একচুলও নড়বে না। দুই পক্ষের এই মুখোমুখি অবস্থান আমাদের ১৯৯৫-১৯৯৬ ও ২০০৪-২০০৬ সালের কথাই মনে করিয়ে দেয়। দুই পক্ষই যদি নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে সমাধান আসবে কীভাবে?

একটি উপায় হলো রাজপথে ফয়সালা। আরেকটি হলো আলোচনার মাধ্যমে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসা। রাজপথে ফয়সালার জন্য দেশ ও জনগণকে কী পরিমাণ ক্ষতি স্বীকার করতে হয়, তা নিশ্চয়ই রাজনৈতিক নেতৃত্বের অজানা নয়। দুই পক্ষেরই উদ্দেশ্য যদি হয় একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, তাহলে তারা একসঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করছে না কেন?

ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল যা-ই ভাবুক না কেন, দেশের মানুষ শান্তি ও স্থিতি চায়। রাজনৈতিক অস্থিশীলতা ও সংঘাতে অতীতে দেশের অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে অর্থনীতি ও সম্পদের ক্ষতি হোক, সেটা কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। অতএব, নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে হবে আলোচনার মাধ্যমেই। এটাই গণতন্ত্রের একমাত্র পথ। সম্প্রতি উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর যেসব প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসেছিলেন, তাঁরাও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন।

আশাকরি, আমাদেররাজনৈতিকনেতৃত্বদেশওগণতন্ত্রেরবৃহত্তরস্বার্থেরাজপথেএকেঅপরকেমোকাবিলারহঠকারীনীতিপরিহারকরবেনএবংআলোচনারমাধ্যমেনির্বাচননিয়েসৃষ্টিসমস্যারসমাধানখুঁজেবেরকরতেদ্বিধাকরবেনা।