ভোলার জেলেরা দুই মাস কীভাবে চলবেন

সম্পাদকীয়

ভোলার দেড় লাখের বেশি জেলে আগামী দুই মাস কীভাবে বেঁচেবর্তে থাকবেন, তা নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা কি নীতিনির্ধারকদের আছে? ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মার্চ-এপ্রিল সেখানকার অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময় মাছ বহন, মজুত ও ক্রয়-বিক্রয়ও নিষেধ। একদিকে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে শাস্তির ভয়—তাহলে এই দুই মাস তাঁদের সংসার চলবে কীভাবে?

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ভোলায় মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা দুটি অভয়াশ্রমে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। অক্টোবর মাসে মা ইলিশ যে ডিম ছেড়েছিল, তা থেকে যে জাটকা ইলিশ হয়েছে, সেগুলো যাতে নিরাপদে সাগরে ফিরে যেতে পারে, তার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে এই পদক্ষেপের বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে প্রান্তিক ও হতদরিদ্র জেলেদের জন্য সরকারি সহায়তার বিকল্প কী আছে?

জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে জেলেপ্রতি ১২০ কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। ভোলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৫। তাঁদের মধ্যে চলতি বছর নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে সাড়ে ৮৯ হাজার জেলেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর মানে ৭৯ হাজার নিবন্ধিত জেলে সরকারি সহায়তার চাল পাবেন না। তবে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে ভোলায় জেলের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ।

এ তো গেল কাগজ-কলমের পরিসংখ্যানের হিসাব-নিকাশ। প্রকৃত বাস্তবতা আরও রূঢ়। জেলেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের জন্য যে চাল বরাদ্দ হয়, তার একটা অংশ নয়ছয় হয়। ইউপি সদস্যরা জেলে ছাড়াও অন্য পেশার দলীয় ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও তাঁদের স্বজনদের চাল দিচ্ছেন। তাঁরা এ অবস্থার অবসান চান। সরকারি সহায়তা না পেয়ে অনেক জেলে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালান। তাঁরা এ সময় ঋণের কিস্তি শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, নিষেধাজ্ঞা সফল করার লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং, প্রচারপত্র বিতরণসহ মাছঘাটগুলোয় সচেতনতা সভা—এ রকম কর্মসূচির কমতি নেই। কিন্তু বিপুলসংখ্যক জেলে কীভাবে দিন পার করবেন, মূল সেই চিন্তাতেই মনোযোগ নেই। জেলেরা অনাহারে-অর্ধাহারে থাকলে ইলিশ উৎপাদন বাড়ানোর প্রকল্পে কতটা সফল হওয়া সম্ভব?

ভোলার জেলেপল্লিগুলোয় যাতে শিক্ষার প্রসার হয়, তাঁরা যেন বিকল্প কর্মসংস্থান খুঁজে নিতে পারেন, সে জন্য অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রকল্প নিতে হবে। কিন্তু মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়টায় তাঁরা যেন খেয়ে–পরে বেঁচে থাকতে পারেন, তার উদ্যোগ সবার আগে নেওয়াটা জরুরি। ভোলার সব নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত জেলেকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনুন।