আর কত দিন চলবে দুর্বিষহ ভোগান্তি

সম্পাদকীয়

খুলনা নগরের নতুন রাস্তার মোড় থেকে পিপলস গোলচত্বর পর্যন্ত বিআইডিসি সড়কের নির্মাণকাজ কেন এগোচ্ছে না? কার স্বার্থে এই ঢিমেতালে গতি? স্বার্থের প্রশ্ন আসছে, কারণ প্রথম আলোর প্রতিবেদন, ‘খুলনার বিআইডিসি সড়ক: এক কিলোমিটারে যত ভোগান্তি’ বলছে, মূল নকশায় সড়ক বিভাজক ছিল না।

নতুন করে সড়ক বিভাজক নির্মাণের কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নাখোশ হয়েছেন। একজন জনপ্রতিনিধি এমনকি এ-ও বলেছেন যে সড়ক বিভাজক যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়েছে। তাঁদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনাও করেনি কর্তৃপক্ষ। তাহলে কি আমরা ধরে নেব সিটি করপোরেশন ও জনপ্রতিনিধিদের বিরোধিতার কারণেই এক কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হচ্ছে না? এ অবস্থা তো চলতে পারে না।

খুলনায় প্রথম আলোর সাংবাদিক ওই অঞ্চলের বাসিন্দা ও যাওয়া-আসা আছে এমন লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখেছেন, পিপলস গোলচত্বর থেকে নতুন রাস্তার মোড় পর্যন্ত সড়কটি ব্যাপক ভাঙাচোরা। ওই অংশের সড়কে গর্ত, কোথাও পানি জমা। এই সড়কের ওপর দিয়ে কোনো যানবাহনে চলাচল করতে গেলে চন্দ্রপৃষ্ঠে হাঁটার অনুভূতি হয়।

খালিশপুরের এই সড়ক ১৯৬০ সালে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন নির্মাণ করেছিল। ২০১৯ সালে সড়কে গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়, নালাগুলোও ঠিকঠাকের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সড়কের দুই-তৃতীয়াংশ মেরামত করা গেলেও এক কিলোমিটারের মতো রাস্তায় কাজ এগোচ্ছে না।

এলাকাবাসী এখন তুলনা করছেন আগের ভাঙাচোরা পথ এখনকার ভাঙাচোরা পথের চেয়ে ভালো ছিল কি না। খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী এত দেরির পেছনে কারণ হিসেবে মূল নকশায় পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, সড়ক বিভাজক তৈরিতে সময় লাগছে। কাজ শেষ করতে আরও তিন-চার মাস লাগবে।

প্রথমত, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষগুলো প্রায়ই প্রকল্পের মাঝপথে এসে নকশা পরিবর্তন করে। এটা কি তাদের দূরদর্শিতার অভাব? নাকি কোনো দুরভিসন্ধিপ্রসূত? খুলনার এই সড়কেই প্রথম এমনটি ঘটল, তা নয়। অতীতেও বড় বড় প্রকল্পে ত্রুটির কথা জানা গেছে প্রকল্পের মাঝপথে। সড়ক নির্মাণের পরপরই মহা-আনন্দে আরেক প্রকল্পের নামে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়িও এই দেশে নতুন নয়। কিন্তু এই দুষ্ট চক্র থেকে কখনোই কি বাংলাদেশ বের হতে পারবে না? এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে কেনই–বা তিন-চার মাস সময় লাগছে?

দ্বিতীয়ত, স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার বাধ্যবাধকতা আছে। সিটি করপোরেশন কেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করল না, সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পদ্ধতিগতভাবে সারা দেশে জনপ্রতিনিধিদের সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকটা খেয়ালখুশির অধীন করে রাখা হয়েছে। এখানেও এমন কিছু ঘটছে কি না, তলিয়ে দেখা দরকার।