দুই পক্ষের মধ্যে আস্থার সংকট দূর হোক

সম্পাদকীয়

দেশের অর্থনীতিতে গতি বাড়াতে সরকার গোটা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ সেগুলোর বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১০ সালে এ–সংক্রান্ত আইন পাস হয়।

যদিও এখন পর্যন্ত ১৮টি শিল্পনগর আংশিক ও পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ১৪৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত উৎপাদন পর্যায়ে গেছে মাত্র পাঁচটি, নির্মাণাধীন রয়েছে আরও ১৮টি। সেখানে একটি পোশাকপল্লি প্রতিষ্ঠার জন্যও জায়গা বরাদ্দ পান পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।

তাঁরা কয়েক ধাপে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকাও জমা দেন। কিন্তু জমি বরাদ্দ চুক্তির দুই বছরেও কেউ সেখানে কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করেননি। এ নিয়ে দুই পক্ষ পরস্পরকে দুষছেন। ফলে সেখানে পোশাকপল্লি প্রতিষ্ঠা নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এমন পরিস্থিতির জন্য বেজাকেই দায়ী করছে। তাদের ভাষ্য, পোশাকপল্লির জন্য নির্ধারিত স্থানে মাটি ভরাট এবং বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থাসহ কোনো কাজই শেষ হয়নি।

স্থান প্রস্তুত করতেই কয়েক বছর লেগে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ, এ সময় নির্মাণ খরচও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বেজার বক্তব্য, সেখানে প্রাথমিক অবকাঠামো, বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব সুবিধা নিয়ে কাছাকাছি এলাকায় অন্য খাতের বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখন উৎপাদন পর্যায়েও রয়েছে। আগামী পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে বাকি সব কাজ শেষ করা হবে।

মূলত সব ধরনের পরিষেবাসহ পুরো জমি একসঙ্গে না পেলে ব্যবসায়ীরা শিল্প স্থাপনে রাজি নন সেখানে। পোশাকপল্লিতে এখন বিজিএমইর ৪০টি প্রতিষ্ঠান বেজার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। কথা হচ্ছে, এতগুলো প্রতিষ্ঠান কি একসঙ্গে সেখানে শিল্পকারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারবে? সবার পক্ষে একসঙ্গে ঋণ পাওয়া ও বিনিয়োগ করাও কঠিনতর কাজ। ফলে যেসব জায়গা প্রাথমিক প্রস্তুত হয়ে গেছে এবং একই সুবিধা নিয়ে অন্য খাতের কারখানার কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে, সেখানে কেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা পিছিয়ে থাকলেন?

করোনা–পরবর্তী ধাক্কা ও ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পোশাক খাত কিছুটা চাপের মুখে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী না–ও হতে পারেন। তাই বলে কি শিল্পনগরের পোশাকপল্লিটি এভাবে পড়ে থাকবে, সেখানে শিল্পকারখানা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না?

বেজা কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যবসায়ীদের জায়গা বরাদ্দ বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর ফলে দুই পক্ষের মধ্যে সংকট বাড়বে বৈ কমবে না। বেজা ও বিজিএমইএর মধ্যে আস্থার সংকট দূর করতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।