কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে আজকে নাগরিক জীবন—শীতকাল মানেই নানা উৎসব আয়োজন। প্রকৃতিতে সেই আয়োজনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় পরিযায়ী পাখির আগমন। যাদের আমরা বলে থাকি শীতের পাখি।
সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে তুলনামূলক উষ্ণ অঞ্চলে খাদ্যের খোঁজে এসব পাখি আসে। কয়েক মাস থেকে আবার ফিরে যায়। যুগ যুগ ধরে এটিই হয়ে আসছে। তবে কয়েক দশক ধরে এসব পরিযায়ী পাখির জন্য দুঃসময় চলছে বলা যায়। লোভী কিছু মানুষের কারণে তাদের অনেকেই আর নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে না।
শিকারিদের শিকারে পরিণত হয় তারা। সেসব পাখির মাংস প্রকাশ্যে বেচাবিক্রিও হয় হোটেলে। মানুষ হিসেবে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের সর্বনাশে আমরা কতটা বেপরোয়া হয়ে গেছি, তার একটি নমুনা হতে পারে এটি।
শীতকালে পরিযায়ী পাখির স্বর্গ বলা যেতে পারে সিলেট ও সুনামগঞ্জ এলাকার বিল, হাওর এলাকা ও চা–বাগানের বিশাল হ্রদগুলো। বিভিন্ন জাতের হাঁসসহ অনেক ধরনের পরিযায়ী পাখির কাকলিতে সরব হয়ে ওঠে এসব এলাকা। কিন্তু প্রতিবছর পরিযায়ী পাখিরা আসতে না আসতেই তৎপর হয়ে ওঠে শৌখিন ও পেশাদার পাখিশিকারিরা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এরই মধ্যে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে শিকারিরা রাতের বেলায় হাওর এবং হাওরসংলগ্ন জলাভূমিতে জালের ফাঁদ পেতে রাখছেন। রাতের অন্ধকারে ওড়ার সময় এসব জালে আটকে পড়ে পরিযায়ী পাখিরা। দেশীয় বিপন্ন প্রজাতির পাখিও এতে শিকারে পরিণত হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওর এলাকার জলাভূমি ও ধানখেতে এ রকম অসংখ্য ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে।
বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী, পরিযায়ীসহ কোনো পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
কিন্তু এ আইনের প্রয়োগ তেমন দেখা যায় না বললেই চলে। মাঝেমধ্যে দু-একজনকে শাস্তি দেওয়া হলেও, তা তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখে না। এর ফলে শিকারিরা নির্বিঘ্নে পাখি শিকার করে যান। এমনকি গড়ে উঠেছে পেশাদার শিকারির চক্রও।
পরিযায়ী পাখির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এসব চক্রের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানোর বিকল্প নেই। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতাও গড়ে তোলা জরুরি। সেখানে স্থানীয় পরিবেশ সংগঠনগুলোকেও সম্পৃক্ত করা যায়। সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলের জেলা-উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে সজাগ হোক।