ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কি কোনো দায়িত্ব নেই

সম্পাদকীয়

গাছপালা ও জলাভূমি কমে যাওয়ার কারণে ঢাকায় তাপীয় দ্বীপ তৈরি হয়েছে। ভয়াবহ দাবদাহে ভুগছে নগরবাসী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার জলাভূমি, পুকুর ও খালগুলো দখল হয়ে না গেলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। খাল দখলমুক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের বেশ তৎপরতা আমরা দেখে থাকি। কিছুদিন খাল দখলমুক্ত থাকে ঠিকই, এরপর আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যায়। আর কোনো কোনো খালের এমন জায়গা আছে, সেদিকে সিটি করপোরেশনের নজরই পড়ে না। সেখানে দখলদারেরা দিব্যি গেড়ে বসেছেন। তাদের উচ্ছেদ করা না গেলে খাল দখলমুক্ত করা কখনো সম্ভব হবে না।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রামচন্দ্রপুর খালে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। অবৈধ দখল উচ্ছেদ, খাল খনন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে উত্তরের সিটি মেয়র নিজেই গেছেন কয়েকবার। তবে প্রতিবারই তিনি গেছেন বছিলা হাউজিং এলাকায় আর চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায়। মেয়র ও কর্মকর্তারা একবারও ভাঙা মসজিদসংলগ্ন সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় যাননি, যেখানে রামচন্দ্রপুর খাল দখল হয়ে গেছে। সেখানে খাল ভরাট করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয় বানিয়েছেন। এ ছাড়া রিকশার গ্যারেজ, রিকশাচালকদের থাকার ঘর, টংদোকান, রান্নাঘরসহ বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

মেয়র ছাড়া সিটি করপোরেশনের স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন একজন নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ফলে মেয়রের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে খালের দেখভালের প্রতিও দায়িত্ববান হওয়ার কথা কাউন্সিলরের। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, মোহাম্মদপুরের ভাঙা মসজিদ এলাকায় রামচন্দ্রপুর খাল দখলের পেছনে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেই। রিকশা গ্যারেজের মালিক, টংদোকানি ও বস্তির বাসিন্দারা সবাই বলছেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনুমতি নিয়ে ওই জায়গায় থাকছেন তাঁরা। এর জন্য প্রতি মাসে কাউন্সিলরকে তিন থেকে সাত হাজার টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া স্থাপনা নির্মাণে তাঁদের সবাইকে এককালীন কিছু টাকা দিতে হয়েছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ।

এলাকাটিতে খাল দখলের বিষয়টি কারও অজানা নয়। এরপরও সেখানে কোনো অভিযান চালানো হয়নি। বারবার একই এলাকায় গিয়ে অভিযান চালিয়ে কি গোটা একটি খাল উদ্ধার করা সম্ভব? ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হোক। আমরা আশা করব, জনপ্রতিনিধি হিসেবে খাল দখলমুক্ত করতে তিনি নিজেই তৎপর হবেন। মেয়রও সেই এলাকায় অভিযান চালানোর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাই। শুধু খাল দখলমুক্ত করাই নয়, সেটি যেন আবার দখল হয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।