নির্বাচন কমিশনের সমুচিত সিদ্ধান্ত

জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলটি নিজেদের জয় নিশ্চিত জেনেই মাঠে নেমেছিল। নিকট অতীতের প্রায় সব নির্বাচনেই এমনটি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল যেভাবে চাইবে, সেভাবে নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সেটি হতে দেয়নি।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বর্জন করায় উপনির্বাচন অনেকটাই নিরুত্তাপ ছিল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা ধারণা করেছিলেন, এই উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী হেসেখেলে জিতে যাবেন। কেননা তাঁকে মোকাবিলা করার সামর্থ্য কারও নেই। নির্বাচনের অপর চার প্রার্থীর একজন জাতীয় পার্টির ও একজন বিকল্পধারার। বাকি দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

বুধবার সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে অনিয়মের খবর আসছিল। সুষ্ঠু ভোট হওয়ার জন্য যেসব বিধিবিধান আছে, সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা তা ক্রমাগত অগ্রাহ্য করে চলেছেন। তাঁরা অন্যান্য প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেরাও গোপন কক্ষে ঢুকে ইভিএমের বাটন টিপেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ছিল। ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে বসে সিইসিসহ অন্যান্য কমিশনার, কর্মকর্তা বড় পর্দায় ভোট গ্রহণের অনিয়মের সেই দৃশ্য অবলোকন করেন। সিসিটিভিতে যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে, সেসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়। দুপুর ১২টা নাগাদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া বাকি চার প্রার্থী ভোট বর্জনের ডাক দেন। এদিকে ভোট বন্ধ হওয়া কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১। বেলা আড়াইটার দিকে নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে দেন।

এই ঘোষণাকে অনেক দল স্বাগত জানালেও আওয়ামী লীগ এর সমালোচনা করেছে। তারা ৫০০ কিলোমিটার দূর থেকে (প্রকৃত দূরত্ব ২৭৫ কিলোমিটার) নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল তার জবাবও দিয়েছেন। অতীতে বাংলাদেশে অনিয়মের কারণে কোনো আসনের পুরো নির্বাচন এভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এ জন্য নির্বাচন কমিশন অবশ্যই সাধুবাদ পেতে পারে। তবে একটি উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ বন্ধ করলেই নির্বাচনী ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে, সে কথা ভাবারও কারণ নেই। এই উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেও স্থানীয় প্রশাসন, যারা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, তাদের ভূমিকা ছিল পক্ষপাতমূলক।

আমরা যদি ধরেও নিই যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের শতভাগ আস্থা আছে। তারপরও প্রশ্ন উঠবে, জাতীয় নির্বাচনে আসনে তারা এ রকম শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি না। একটি আসনে তারা যতটা নিবিড়ভাবে নজরদারি করতে পেরেছে, ৩০০ আসনে তা করা সম্ভব হবে কি না। এই উপনির্বাচনে আরও একটি সত্য বেরিয়ে এসেছে যে স্থানীয় প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে মোটেই আন্তরিক ছিল না।

গাইবান্ধা উপনির্বাচনের ঘটনায় নির্বাচন কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা আশা করব, তদন্ত কমিটি ভোটে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পারবে। সৎ উপদেশ দিয়ে নির্বাচনী ডাকাতদের নিবৃত্ত করা যাবে না। সে জন্য তাদের শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। আশা করি, এ ব্যাপারে কমিশন সরকারের সহযোগিতা পাবে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য একটি কঠিন বার্তা দিল নির্বাচন কমিশন। এখন সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের উচিত হবে জবরদস্তি করে ভোটে জয়ী হওয়ার চেষ্টা না করে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া নির্বাচনী ব্যবস্থাটি পুনরুদ্ধারে কমিশনকে সহায়তা করা।