অযৌক্তিক নয়, বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিন

সম্পাদকীয়

সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে গৃহকর। এর বিনিময়ে সেখানকার বাসিন্দারা নাগরিক সুবিধা ও সেবা পান। দেশের কোনো সিটি বা পৌর শহরে নাগরিক সুযোগ–সুবিধা কেমন, তা খোলাসা করার কিছু নেই। সেবা নিয়ে নানা অপ্রাপ্তি ও অসন্তুষ্টি থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর গৃহকর দিয়ে যান নগরবাসী। তবে সেই গৃহকর নির্ধারণেও কি যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়? এর আগে আমরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে এ নিয়ে আন্দোলন দেখেছি। এবার একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সিলেটেও। গৃহকর নির্ধারণে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখানকার বাসিন্দারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ।

গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন নতুন নির্ধারিত গৃহকর অনুযায়ী গৃহকর পরিশোধের জন্য ভবনমালিকদের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো ভবনের কর এসেছে আগের বছরের তুলনায় কয়েক শ গুণ। আগের নিয়মে ১২ ফ্ল্যাটের একটি ভবনে গত বছর যেখানে গৃহকর ছিল ৬০০ টাকা, সেটি বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে দেড় লক্ষাধিক। এখানে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে, কয়েক তলা একটি ভবনের মাত্র ৬০০ টাকা গৃহকর কীভাবে থাকে? ফলে নানা বাস্তবিক পরিস্থিতিতে নতুনভাবে গৃহকর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিতেই পারে সিটি করপোরেশন, তাই বলে একলাফে ২০০–২৫০ গুণ বাড়িয়ে দেবে, তা কীভাবে সম্ভব?

শুধু বহুতল ভবন নয়, আবাসিক কাঁচা কিংবা আধা পাকা ভবনের ক্ষেত্রেও আগের বছরের তুলনায় দিতে হবে ১০ থেকে ৫০ গুণ গৃহকর। সিটি করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও নতুন গৃহকর বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করছে। তাদের বক্তব্য, কোনোভাবে যাচাই–বাছাই না করে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনভাবে এ গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ২০১৯-২০ সালে ভবনগুলোর আয়তন ও ধরন অনুযায়ী নতুনভাবে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কারও আপত্তি থাকলে তাঁরা তা আবেদন করে জানাতে পারবেন। তবে সাবেক মেয়র আরিফুল হকের বক্তব্য, তাঁর মেয়াদকালে ভবনের আয়তন ও ধরন অনুযায়ী একটি মূল্যায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অনুসারে নতুনভাবে গৃহকর তিনি নির্ধারণ করেননি। ফলে বর্তমান সিদ্ধান্তের দায় কোনোভাবেই তাঁর নয়।

আবার করপোরেশনের রাজস্ব শাখার মতে, এর আগে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালার আলোকে গৃহকর আদায় করা হয়নি। তবে নগরবাসীর অনেকে বলছেন, রাজস্ব শাখার এমন বক্তব্য ঠিক নয়। আগেও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসারে গৃহকর দিতেন। তবে অনেকে আবেদন করে সেটি কমিয়ে নিতেন। আমরা আশা করব, স্থানীয় সচেতনমহল, সুধী সমাজ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে সিটি করপোরেশন গৃহকর নির্ধারণে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে। নগরবাসীর ওপর এভাবে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া প্রত্যাশিত হতে পারে না।