গুলি চালানো কাউকে ছাড় নয়

গোটা দেশের নদী-খালগুলো খুবলে খাচ্ছে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা। তারা পরিবেশের সর্বনাশ তো করেই যাচ্ছে, অসংখ্য জনপদকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের মদদে বালুখেকোরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। সেই সরকারের পতন হলেও বালুখেকোদের আস্ফালন থামেনি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বালুখেকোদেরও রাজনৈতিক পরিচয় বদলে গেছে। তারা এখনো বেপরোয়া। তাদের আটকাতে গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর গুলিও চালানো হচ্ছে। নরসিংদীর রায়পুরায় এ ঘটনা ঘটেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রায়পুরার চরাঞ্চলে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে গত বৃহস্পতিবার অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রত্যন্ত চরাঞ্চল চরমধুয়া ইউনিয়নের সমীবাদ এলাকার মেঘনা নদীতে তাঁদের ওপর বালু উত্তোলনকারী খননযন্ত্র (ড্রেজার) থেকে ১০-১২টি গুলি ছোড়া হয়। এতে অল্পের জন্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার, ভূমি (এসি ল্যান্ড), জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্তত ২৫ জন। পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য না থাকায় ওই অভিযান অসমাপ্ত রেখেই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ফিরে আসেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যরা।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য, নদীতীরবর্তী স্থান থেকে কাটিং ড্রেজারের পরিবর্তে নিষিদ্ধ চুম্বক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিবছরই নদীভাঙনে শত শত বাড়িঘর বিলীন হচ্ছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে বালুখেকোরা অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে। একাধিকবার জেল–জরিমানা করা হলেও কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না এই বালুখেকোদের। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুম্বক ড্রেজার দিয়ে দিনে–রাতে বালু তুলছে তারা। বালুখেকোদের আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রের ভয়ে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেওয়া রায়পুরার ইউএনও মো. মাসুদ রানা জানান, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাই। এ সময় খননযন্ত্র থেকে বালু উত্তোলনকারীরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি ছোড়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওই স্থানে যৌথ বাহিনী নিয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

আমরা আশা করব, গুলি ছোড়া ব্যক্তিদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ অঞ্চলে বালুখেকোদের অবৈধ তৎপরতা থামাতে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হোক। 

নদীভাঙন থেকে স্থানীয় জনপদের মানুষকে সুরক্ষা দিতে এই দুর্বৃত্তদের থামাতেই হবে। নয়তো নদীভাঙনের শিকার মানুষের পুনর্বাসনের দায়দায়িত্ব প্রশাসনের ওপরেই ন্যস্ত হবে। বালুখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কোনো রাজনৈতিক প্রভাবকে তোয়াক্কা করা যাবে না। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহনে সব যন্ত্রপাতি, ড্রেজার, বাল্কহেড, ট্রাক জব্দ করা হোক।