হাওরে ফি বছরের অনিয়ম শেষ হোক

সুনামগঞ্জের হাওর হচ্ছে ফসলের ভান্ডার। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই ভান্ডারে বারবার হানা দিচ্ছে বন্যা। ফলে হাওরের ফসল রক্ষা নিয়ে প্রতিবছরই দুশ্চিন্তা বাড়ছে। সেখানে ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণ নিয়ে অনিয়ম ও অবহেলা নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরই এ অনিয়ম খবর হয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে। এ বাঁধের সঙ্গে কৃষক ও সুবিধাভোগীরা যুক্ত থাকলেও দিন শেষে তাঁরাই ভুক্তভোগী হন। এবারও তেমন আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।

২০১৭ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদারদের কাছ থেকে বাঁধ নির্মাণের ভার চলে যায় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের কাছে। তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিটি প্রকল্পের জন্য পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) থাকে। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে। কিছুসংখ্যক ঠিকাদারের বদলে এর সুবিধাভোগী এখন কয়েক শ কৃষক। তা ছাড়া ফসলের সুরক্ষায় দায়িত্ব কৃষকদের চেয়ে ভালো আর কে পালন করতে পারেন। ফলে এ পিআইসি মডেল বেশ প্রশংসিত হয়। 

পিআইসির গোটা প্রকল্পের জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আর সদস্যসচিব পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী। নিয়ম অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন করতে হয়। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করে শেষ করতে হয় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনো বছরই এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। প্রতিবছর গড়িমসি করতে করতে কাজ শেষ হয় মার্চের শেষে গিয়ে। যদিও এবার নির্বাচনের অজুহাত দেখানো হচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এ বছর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময়ের ৭৫ দিনের মধ্যে ৩৩ দিনই চলে গেছে অথচ পাউবোর হিসাবে কাজের অগ্রগতি ১০ শতাংশ। গত সোমবার পর্যন্ত বাঁধের জন্য নেওয়া ৭৩৩টি প্রকল্পে মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে ৩৯০টিতে। তবে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যরা বলছেন, মাঠের অবস্থা আরও খারাপ। এবার কাজে শুরু থেকেই গাফিলতি আছে। সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে যদি এবারও কাজ শেষ না হয়, তাহলে ফসল ঝুঁকিতে পড়বে।

অভিযোগ উঠেছে, পিআইসি গঠন ও প্রকল্প পাওয়ার বিষয়টি এখন রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে। অসাধু কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন সাধারণ কৃষকেরা। গোটা বিষয়টিকে বিতর্কিত করে বাঁধ নির্মাণের কাজটিকে আবারও ঠিকাদারদের হাতে তুলে দেওয়ার ধারাবাহিক চক্রান্তও চলছে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।

হাওরে প্রতিবছর আমরা এই সমস্যা দেখতে চাই না। পিআইসি গঠন নিয়ে সব অভিযোগের অবসান ঘটুক। সুনামগঞ্জের ফসল–ভান্ডার নিয়ে নয়ছয়ের কোনো সুযোগ নেই। জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও পাউবোর প্রতি বারবার আঙুল উঠুক, আমরা চাই না।