আর কত চোখ বুজে থাকা

সম্পাদকীয়

৬ জন শিক্ষক আর ২২০ শিশুর ভোগান্তিতে জনপ্রতিনিধি আর সরকার—কারও যে কিছুই যায় আসে না, আবারও তার প্রমাণ পেলাম আমরা। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ডুবিসায়বর হাট হলো জেলার বৃহত্তম কৃষিপণ্যের পাইকারি ক্রয়-বিক্রয়ের বাজার। গত বছর এপ্রিলে প্রথম আলো এই বাজারলাগোয়া ডুবিসায়বর হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ময়লার ভাগাড়ের খবর দিয়েছিল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই ভাগাড় বন্ধে উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন। ফলে পরিস্থিতি যে কে সেই। প্রতিদিন স্কুলের সামনে মুরগিপট্টি, মাছ ও মাংসপট্টি, কাঁচাবাজারের বর্জ্য জমা হচ্ছে। প্রতিদিন ময়লা মাড়িয়ে শিশুরা স্কুলে ঢুকছে। শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও দুর্গন্ধের তীব্রতা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। মশা-মাছির উপদ্রব তো আছেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ভাগাড় সরানোর জন্য প্রধান শিক্ষকের হাজারো অনুরোধ-উপরোধে কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি।

এই প্রেক্ষাপটে মনে প্রশ্ন জাগে, এই শিশুরা ‘আমাদের’ই কি না! যদি স্কুলগামী এই শিশুদের কর্তৃপক্ষ নিজেদের সন্তান বা স্বজন বলে ভাবত, তাহলে কি এমন চলতে পারত? শুধু স্কুল বানিয়েই যদি সরকার দায় সারে, তাহলে সর্বজনীন শিশুশিক্ষা বা সুস্থ ও আনন্দময় পরিবেশে শিশুর বেড়ে ওঠা নিশ্চিতের দায় কার?

অথচ এই জাজিরায় কে নেই? সংসদ সদস্য, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আছেন। আছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এরপরও শিশুদের এই দুর্গতি কেন?

অথচ বাংলাদেশে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা আছে। আইনে স্থানীয় সরকারের দায়িত্বের সংখ্যা ২৮টি। তার মধ্যে একটি হলো তিন ধরনের বর্জ্য আলাদাভাবে ও ঢাকা দিয়ে পরিবহন করা।

‘বর্জ্য সৃজনকারী’ ও ‘বর্জ্য ব্যবহারকারী’দের কী কী নিয়ম মানতে হবে, সে সম্পর্কেও বলা আছে। মোটের ওপর কোনোভাবেই বর্জ্যের কোনো অংশ উন্মুক্ত রাখা যাবে না। বাজার পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা বলছেন, সরকার তাঁদের ময়লা ফেলার জন্য কোনো জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়নি।

বাজার পরিচালনা কমিটি কি উদ্যোগী হয়ে স্থানীয় সরকারের কাছে একটা জায়গা চেয়ে নিতে পারত না? তারা সেই তাগিদই বোধ করেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শরীয়তপুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে কিছু নেই। সর্বত্র ময়লার ছড়াছড়ি, এদের গন্তব্য খাল-বিল, নদীনালা। কীর্তিনাশা নদীটা এখন বর্জ্যের ভারে হাঁসফাঁস করছে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলি। তাঁর গলায় অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট। তিনি ময়লা না ফেলার অনুরোধ জানিয়ে একটা সাইনবোর্ড টানিয়েছিলেন। সেটাও কেউ রাতের অন্ধকারে খুলে নিয়ে গেছে। এই যদি হয় অবস্থা, তবে অন্ধকারেই মরতে হবে জাতিকে।