দ্রুত চিকিৎসক ও জনবল নিশ্চিত করুন 

সম্পাদকীয়

যখন যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, সবারই লক্ষ্য থাকে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া। বর্তমান সরকারের আমলেও সেটি আমরা অনেকবার শুনেছি। এটি অস্বীকার করা যাবে না যে এ ব্যাপারে তারা সফল হয়নি। ইউনিয়নে ইউনিয়নে এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।

কিন্তু সেগুলো থেকে মানুষ যথাযথভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা দেশে অনেক হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিত্যক্ত হয়ে আছে। অনেকগুলো হয়ে পড়েছে মাদকসেবীর আখড়া। কোথাও কোথাও নেই চিকিৎসক।

এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত এলাকায় রোগীদের যে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, তা কল্পনাতীত। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি, খুলনার কয়রা উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে। সেখানকার একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ছয় মাস ধরে তালাবদ্ধ। চিকিৎসাসেবার জন্য সেখানকার মানুষকে নিয়তির ওপর নির্ভর করতে হয়। নারী, বয়স্ক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীই ভুক্তভোগী হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। 

২৭ হাজার বাসিন্দার দক্ষিণ বেদকাশীকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে দুটি নদী। নদী পার হলেই আবার সুন্দরবন। সড়কপথে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্নই বলা চলে। ফলে মুমূর্ষু রোগীকে ৬৫ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে নিয়ে যেতে লেগে যায় প্রায় ১০ ঘণ্টা।

তা-ও যথাসময়ে লঞ্চঘাটে যেতে পারলে। নয়তো ট্রলারে করে বাড়তি খরচ পোহাতে হয়। দুর্যোগের সময় কয়রা এলাকায় কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়, সেটি আমাদের কারও অজানা নয়। সে সময় রোগীদের নিয়ে স্বজনদের ভোগান্তি আরও বেশি চরম আকার ধারণ করে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভাষ্য, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটি স্থাপনের পর থেকে খোলা হতো মাঝেমধ্যে। এখন চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। ভৌগোলিক ও যাতায়াতব্যবস্থার কারণে এখানকার মানুষের জন্য জরুরি মুহূর্তে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কঠিন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বক্তব্য, দুর্গম এলাকা হওয়ায় চিকিৎসক সেখানে যেতে চান না। ডিসেম্বরের আগে বিষয়টি সমাধান সম্ভব হচ্ছে না।

আমাদের কথা হচ্ছে, কোনো চিকিৎসক সেখানে নিয়োগ পাওয়ার পর কেন থাকতে চাইবেন না। দুর্গম এলাকাগুলোতে এই বাস্তবতা নতুন নয়। সরকারি দায়িত্ব পালনে এমন অনীহা দুঃখজনক। খুলনার প্রান্তিক এলাকাটিতে দ্রুত চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করা হোক। এভাবে মাসের পর মাস স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ থাকবে, এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই, এক দিনও যাতে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র
বন্ধ না থাকে।