বিসিকের বিক্রয়কেন্দ্রটি দ্রুত চালু করুন

সম্পাদকীয়

মানুষের কর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অনেক প্রকল্প দারুণ ভূমিকা রাখে। সেগুলো বেশ প্রশংসিতও হয়। অনেক সময় ধারাবাহিকতার অভাবে সেগুলোর সুফল পুরোপুরি পাওয়া যায় না। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতা, অবহেলা বা অনিয়ম কিংবা বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে এমনটি ঘটে থাকে। তেমনটিই আমরা দেখলাম রংপুরের গঙ্গাচড়ায়।

সেখানকার একটি তাঁতিপাড়ায় বিপুল মানুষকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে বেনারসিশিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক)। কিন্তু উৎপাদিত পণ্য নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন সেখানকার তাঁতিরা। কারণ, পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য বিসিক সেখানে যে কেন্দ্রটি করেছিল, সেটি গত ৯ বছরেও চালু হয়নি। ফলে বিসিকের কারণেই সেখানকার তাঁতশিল্পে যে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে, সেটি আবার হারিয়ে যেতে বসেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, ২০০৯ সালে সোয়া কোটির বেশি অর্থের একটি প্রকল্পে ৪৩টি প্রশিক্ষণ ব্যাচে ৮৬০ জন তাঁতিকে প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। সেই প্রকল্পের অধীনে পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় চালু না হওয়ায় সেই বিক্রয়কেন্দ্রটি ৯ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। পড়ে থাকতে থাকতে ভবনটি অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। ভবনের পলেস্তারা খসে গেছে। দরজা-জানালা, আসবাব নষ্ট গেছে। সীমানাপ্রাচীরও ভেঙে গেছে।

তাঁতিপাড়ার ঐতিহ্য অনেক আগে থেকেই আমরা হারাতে বসেছি। এরপরও এটি একটি বিশাল ঘটনা যে গঙ্গাচড়ার গজঘণ্টা হাবু তাঁতিপাড়ার বেনারসিপল্লির প্রায় আট হাজার পরিবার এখনো সেই শিল্প ধরে রেখেছেন। তাঁতিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁদের কারখানাগুলোতে বেনারসি শাড়িসহ অন্যান্য পণ্য তৈরি হচ্ছে।

ঢাকা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানকার পণ্য কিনে নিয়ে যান। কিন্তু বিসিকের বিক্রয়কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিপণনে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁতিদের। তাঁদের উৎসাহেও ভাটা পড়ছে। একসময় এই পল্লিতে ছয় শতাধিক তাঁত থাকলেও তা কমে এখন কমে ১০০টিতে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পল্লিতে দক্ষ কারিগরের সংকটও দেখা দিয়েছে।

রংপুর বিসিক অফিসের বক্তব্য, নতুন করে প্রকল্প চালু ও ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী করতে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আমরা আশা করব, শিল্প মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব দেবে। পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়কেন্দ্রটি চালু করার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক। তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সেটি আরও বেশি প্রয়োজন।